৮ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি শিখন অভিজ্ঞতা ২: ডিজিটাল প্রযুক্তি বিশ্ব পরিস্থিতিকে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করছে। প্রযুক্তির গতি যেহেতু সমাজের স্বাভাবিক বিবর্তনের চেয়ে দ্রুততর, অনেক সময়ই সমাজের রীতিনীতি ও আইনের সাথে তাল মিলাতে পারে না ও আমাদের রক্ষা করতে পারে না।
কাজেই নিরাপদ ও ভারসাম্যপূর্ণ ডিজিটাল জীবনযাপনের জন্য আমাদের নিজেদেরকেই সচেতন হতে হবে। শুধু তাই নয় নিজেরা শেখার পর এটি আমাদের পরিবারের সদস্যদেরও শেখাতে হবে। এখানে আমরা সেই অভিজ্ঞতাই অর্জন করব।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি – ৮ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি শিখন অভিজ্ঞতা ২
সেশন-১: তথ্য ঝুঁকি ও সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে আমি কতটুকু জানি
আমরা আগের শ্রেণিতে ইতোমধ্যে তথ্য ঝুঁকি ও সাইবার নিরাপত্তার প্রাথমিক ধারণাগুলো পেয়েছি। শুধু তাই নয়, আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদেরও এসব ব্যাপারে অনেক সচেতন করেছি। এ পর্যায়ে আমরা এই ধারণাগুলোর আরেকটু গভীরে যাব। সাইবার দুর্বৃত্তরা মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য অনুমতি ছাড়া নিয়ে নেওয়ার জন্য অনেক উপায় বের করেছে। এমন কয়েকটি উপায় সম্পর্কে আমরা এখন জানব।
আমাদের বাবা মা বা পরিচিত অনেকের মোবাইলে মেসেজ বা ই-মেইল আসে যেখানে একটি লিংক পাঠিয়ে ক্লিক করার জন্য বলা হয়। বলা হয় যে ক্লিক করলে অনেক টাকা বা দামি পুরস্কার পাওয়া যাবে। এ ধরনের ঘটনাকে বলে ফিশিং।
ফিশিং (Phishing)
ইংরেজি বানান ভিন্ন হলেও এটি মূলত বড়শির ফাঁদ ফেলে মাছ ধরার ধারণা থেকে এসেছে। পরিচিত ব্রা আমরা বিশ্বাস করি এমন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে যোগাযোগ করে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ, গোপনীয় তথ্য বা আর্থিক সম্পদ হাতিয়ে নেওয়াকে ফিশিং বলে।
সেশন-২: আমার পরিবারের মুঠোফোন কতটুকু নিরাপদ
বাংলাদেশে মুঠোফোনের গ্রাহকসংখ্যা আমাদের মোট জনসংখ্যারও বেশি। এর অর্থ হচ্ছে বয়স বা অন্য কোনো কারণে যদি আমরা এখনও মুঠোফোন নাও পাই, আমাদের আশে পাশে অনেকেই বা পরিবারের অনেক সদস্যই এই মুহূর্তে মুঠোফোন ব্যবহার করছে, তাও অনেকের একই সাথে একাধিক নম্বর রয়েছে। আমরাও হয়তো কিছুদিনের মধ্যে এটি ব্যবহারের সুযোগ পাব। কাজেই এখন থেকেই মুঠোফোনের নিরাপদ ব্যবহার নিয়ে সচেতন হওয়া দরকার।
একটি আধুনিক বা স্মার্ট মুঠোফোন, যেটি স্মার্টফোন নামেও পরিচিত, দেখতে নিচের মত। এর গঠন, কার্যকারিতা, যন্ত্রাংশ ইত্যাদি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই একেক ব্র্যান্ডের একেক মডেল ও ভার্সনের মুঠোফোন বাজারে চলে আসে। যেটি আগের চেয়ে আরো বেশি গতির ও কার্যকরী হয়।
সেশন-৩: জাল ডিজিটাল উপাত্ত ও ক্লাসরুম গোয়েন্দাবাহিনী
আমরা নিশ্চয়ই বিভিন্ন সময় পত্রিকায় বা আশেপাশে আসল ও নকল পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখেছি। আমরা জানি আমাদের সমাজের একটি চর্চা অনেক আগে থেকেই ছিল কিন্তু ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণে এটির গতি ও প্রভাব অনেক বেড়ে গেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে যদি কেউ ভাল কাজ করে খুব দ্রুত সেটি যেমন ছড়িয়ে যায়, কেউ যদি কোনো খারাপ কিছু করে সেটিও অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছড়িয়ে অনেককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
ডিজিটাল উপাত্তের অধিতথ্য বা মেটাডেটা বোঝা এ কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ধরি আমাদের কাছে একজন কোনো ঘটনার একটি ছবি মুঠোফোনে পাঠিয়ে বলল ঘটনাটি এইমাত্র ঘটেছে। এখন আমরা কিভাবে বুঝব যে সেই মানুষটি পুরনো কোনো ছবি আজকের ছবি বলে চালিয়ে দিচ্ছে কিনা? অথবা এক জায়গার ছবি আরেক জায়গার বলে চালিয়ে দিচ্ছে না?
অধিতথ্য বা মেটাডেটা হলো তথ্য সম্পর্কিত আরো তথ্য। যেমন: একটি বইয়ের অধ্যায়গুলোকে যদি আমরা তথ্য হিসেবে কল্পনা করি, তাহলে রেফারেন্স বা মূল উৎস হতে আরো তথ্য যাচাই করা হলো অধিতথ্য, যেমন পিনকোডের বিষয়ে আগের সেশনে তথ্যসূত্র: ডেটা জেনেটিক্স লিখা পড়েছিলাম তা ছিল অধিতথ্য পাওয়ার উৎস।
সেশন-৪: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতন্দ্র প্রহরীদল
আমরা এর আগের শ্রেণিগুলোতে ডিজিটাল যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমের সাথে পরিচিত হয়েছি। একবিংশ শতাব্দীতে যে ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যমটি সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সেটি হল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া। আমরা নিশ্চয়ই অনেকেই বিভিন্ন ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে পরিচিত, তাই না? পরিচিত না হয়ে থাকলে কোন সমস্যা নেই। কিছুক্ষণের মাঝেই আমরা পরিচিত হয়ে যাব।
সেশন-৫: ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপত্তায় অতন্দ্র প্রহরীদল
আমরা ইতোমধ্যে তথ্য ঝুঁকি, মুঠোফোনের নিরাপত্তা, জাল ডিজিটাল উপাত্ত শনাক্ত করা, আর ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহার সম্পর্কে জেনেছি। যে বিষয়টি এসব কিছুর সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত তা হলো ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা। আমরা সবাই পাসপোর্ট সম্পর্কে জানি। কোনো বাংলাদেশী নাগরিক যখন দেশের বাইরে যেতে চান তার পাসপোর্ট থাকতে হয়।
একটি পাসপোর্ট পেতে প্রথমে কিছু তথ্য একটি ফর্মে জমা দিতে হয়। এই ফর্মে বেশ কিছু তথ্য থাকে যেসব আমাদের একান্ত গোপনীয়। আগের শ্রেণিতে আমরা জেনেছিলাম ব্যক্তিগত গোপন তথ্য কী আর কীভাবে ব্যক্তিগত গোপন তথ্য সুরক্ষিত রাখা যায়। সবাই যদি এই তথ্যগুলো জেনে যায় তাহলে প্রতারকেরা এর অপব্যবহার করতে পারে। আমরা এখন সেই অংশগুলো চিহ্নিত করব।
আরও দেখুন: তথ্য যাচাই অভিযান – ৮ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি শিখন অভিজ্ঞতা ১
আরও দেখুন: ৮ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি সকল অধ্যায় এর সমাধান
আশাকরি “ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি – ৮ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি শিখন অভিজ্ঞতা ২” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ ও সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।