নাগরিক সেবা ও ই-কমার্সের সুযাগ গ্রহণ করি – ৮ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি শিখন অভিজ্ঞতা ৩

৮ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি শিখন অভিজ্ঞতা ৩: সরকারি যেকোনো সেবা আগের চেয়ে অনেক সহজেই আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিতে পারছি। এখন আর কোনো সেবা নিতে অফিসে বা দূরে গিয়ে অনেক সময় ব্যয় করতে হচ্ছে না। নাগরিক সেবা সহজীক রণে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তির যেমন ব্যবহার করছি, তেমনি কেনাকাটাতেও আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই সেবা নিতে পারছি। আমাদের এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নাগরিক সেবা ও ই-কমার্স সেবা নিতে কী কী পদক্ষেপ নিব এবং এর জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা উপস্থাপন করব।


নাগরিক সেবা ও ই-কমার্সের সুযাগ গ্রহণ করি

সেশন-১: নাগরিক সেবার শ্রেণিবিন্যাস

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী অহনা বিজ্ঞান বইটির একটি সফটকপি সে তার মায়ের মোবাইলে ডাউনলোড করতে চায়। সে এনসিটিবির ওয়েবসাইট থেকে খুব সহজেই তা ডাউনলোড করে এখন যেকোন সময়ে বিজ্ঞান বিষয়ের পাঠগুলো পড়ে নিতে পারছে। এই যে অহনা একটি সেবা পেল সেটিকে আমরা বলি নাগরিক সেবা। এনসিটিবি সারা দেশের সকল শিক্ষার্থীর কাছে বই পৌঁছে দেয়ার সাথে সাথে ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও এই নাগরিক সেবাটি দিচ্ছে।

সেশন-২: ই-কমার্সের শ্রেণিবিন্যাস

ব্যবসা বাণিজ্য বা কেনাবেচায় ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করা দিনে দিনে বাড়ছেই। জীবনকে সহজ করতে আমরা ইন্টারনেট বা অনলাইন ভিত্তিক এই কেনাবেচাকে ই-কমার্স বলি। অর্থাৎ ই-কমার্স বা ইলেকট্রনিক কমার্স একটি ব্যবসায়িক মডেল, যেখানে পণ্য এবং সেবার বিনিময় ইন্টারনেট বা অনলাইন মাধ্যমে হয়।

ঘটনা-১

দিপুর বাবা খাইরুল সাহেব আধুনিক শপিং সেন্টারে ছেলেদের পোশাক বিক্রি করেন। তিনি ঢাকার চকবাজার থেকে নিজে গিয়ে পাইকারিতে পণ্য কিনে অল্প লাভে বেশি বিক্রি করতেন। কিন্তু পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এখন অনলাইনে পণ্যের জন্য অর্ডার করলে অল্প খরচে পার্সেলের মাধ্যমে চকবাজার থেকে পাইকারি বিক্রেতা পণ্য পাঠিয়ে দেয়। ফলে খাইরুল সাহেব আগের মতোই অল্প লাভে পণ্য বিক্রি করতে পারছেন।

ঘটনা-২

সুজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন যে ঢাকা শহরের মধ্যে কেউ যদি ব্যবহৃত পুরনো, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী বিক্রি করতে চান তাহলে যেন তার সাথে যোগাযোগ করেন। প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ সুজনকে জানালে তিনি ব্যবহারযোগ্য মালামাল পার্সেলের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন। সংগ্রহকৃত মালামাল কিছুটা মেরামত করে পুনরায় বিক্রয়যোগ্য করা হয়।

ঘটনা-৩

তমালের মা অপরূপা বাসার জন্য একটা ফ্রিজ কিনেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন ব্যবহার করে দেখলেন যে তার এরচেয়ে বড় আকারের একটি ফ্রিজ দরকার। তাই আন্নাফীর মা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি থেকে কেনাবেচার একটি পেইজে কেনা দামের চেয়ে কমে বিক্রির জন্য পোস্ট দিলে আগ্রহী একজন সেটি কিনে নিলেন। কিছুদিনের মধ্যে অপরূপা তারই মতো আরেকজনের কাছ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নিজের জন্যও পছন্দ মতো একটি ফ্রিজ অল্প দামে কিনে ফেললেন।


৮ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি শিখন অভিজ্ঞতা ৩

সেশন-৩: নাগরিক এবং ই-কমার্স সেবা উদ্যোগের পূর্বশর্ত

কার জন্য এবং কোথায় কী চাহিদা তা বিবেচনা করেই সেবার উদ্যোগ শুরু করতে হয়। এই যে ‘কার জন্য’ এবং ‘কোথায় কী চাহিদা ’ বলতে আমরা বুঝি ‘টার্গেট গ্রুপ’ ও ‘প্রেক্ষাপট’। আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে এই বিষয়গুলো বিবেচনা করেই আমরা উপহার তৈরি করেছিলাম। এবার আমাদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও আমরা ‘টার্গেট গ্রুপ’ ও ‘প্রেক্ষাপট’ নির্বাচন করব। যেহেতু এই অভিজ্ঞতায় একটি সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করব তাই ক্ষুদ্র পরিসরে আমাদের সেবার টার্গেট গ্রুপ নির্বাচন করাই ভাল হবে। আমাদের আশেপাশে যারা রয়েছেন তাদেরকেই আমরা টার্গেট গ্রুপ হিসেবে বিবেচনা করতে পারি।


সেশন-৪ ও ৫: সেবা প্রদানের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন

ডিজিটাল মাধ্যমে সেবা দেওয়ার আরেকটি দিক হলো ডিজিটাল পেমেন্ট বা আর্থিক লেনদেন। বিশেষ করে ই-কমার্সের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ আর্থিক লেনদেন অনলাইন বা মোবাইলে করা হয়ে থাকে। যেমন, আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের কোনো সংশোধনের জন্য চার্জ বা পণ্য কেনার পর টাকা পরিশোধ করতে হয় মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে।

আবার অনেকক্ষেত্রে কোনো সেবায় ডেলিভারির সময়ও সরাসরি আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকে। এজন্য যেকোনো উদ্যোগের আর্থিক লেনদেন কেমন হবে তার একটি পরিকল্পনা থাকতে হয়।

গত শ্রেণিতে ই-কমার্সের মাধ্যমে সেবা প্রাপ্তির ধাপগুলো জেনেছিলাম। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠিত কোনো ই-কমার্সের প্লাটফর্ম থেকে সেবা গ্রহণের ধাপগুলো অনুসন্ধান করে বের করেছিলাম এবং ভূমিকাভিনয়ের মাধ্যমে ই-কমার্সের সেবা নেওয়ার ধাপগুলো অনুশীলন করি। এই অভিজ্ঞতায় আমরা নিজেরা উদ্যোক্তা হয়ে কী করে একটি উদ্যোগ নেওয়া যায় তার পরিকল্পনা করব।

ই-কমার্স উদ্যোগ গ্রহণে কি কি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে?

  • টার্গেট গ্রুপ কারা
  • সেবার চাহিদা কেমন
  • কোন এলাকায় সেবা দেওয়া হবে
  • কী কী সেবা দেওয়া হবে
  • সেবার উৎস কী কী
  • সেবার দাম বা চার্জ নির্ধারণ
  • আইনগত ভিত্তি বা অনুমোদনের কী কী ডকুমেন্ট লাগতে পারে
  • ডিজিটাল মাধ্যম হিসেবে কোন প্লাটফরম ব্যবহার করা হবে
  • উদ্যোগ সম্পর্কে অন্যরা কীভাবে জানতে পারবে
  • কীভাবে সেবা পৌঁছানো হবে
  • আর্থিক লেনদেন কীভাবে হবে
  • এই উদ্যোগে আর কার কার সহায়তা নেওয়া যায়
  • দ্রুত ও সবসময় যোগাযোগের মাধ্যম কী

সেশন-৬ ও ৭: পরিকল্পনার উপস্থাপনা প্রণয়ন (ব্যবহারিক)

নাগরিক বা ই-কমার্স উদ্যোগ গ্রহণ করার পরিকল্পনা করা হয়ে গেছে। এখন এই পরিকল্পনাটি আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনার জন্য আমরা একটি পোস্টার ডিজাইন করব। প্রত্যেক দলের প্রস্তুতকৃত পোস্টার নিয়ে আমরা একটি *মেলার আয়োজন করব। এর আগেও আমাদের কাজের উপস্থাপনার জন্য সৃজনশীল কনটেন্ট তৈরি করেছিলাম। কনটেন্ট প্রণয়নে বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায়।

কোনো কোনো সফটওয়্যার বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়, আবার কিছু কিছু সফটওয়্যার কিনে ব্যবহার করতে হয়। আবার এসব সফটওয়্যার কম্পিউটারে ইনস্টল করা লাগতে পারে, আবার কোন কোনগুলো অনলাইনে সরাসরি কাজ সম্পন্নের মাধ্যমে করে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করা যায়।


কাজ ১: ইলাস্ট্রেটরের টুলস পরিচিতি লিখ?

ব্যবহারের শুরুতেই আমাদেরকে ইলাস্ট্রেটরে বেশি ব্যবহার করতে হবে এমন টুলগুলো সম্পর্কে পরিচিত হয়ে নিই।
Selection Tool:
এই টুলের সাহায্যে ছবির অবজেক্ট সিলেক্ট করা হয়। মাউস ড্র্যাগ করে অবজেক্টকে সুবিধামত স্থানে স্থানান্তর করা যায়।

Direct Selection tool: এর মাধ্যমে অবজেক্টকে সরাসরি সিলেক্ট করা যায় ও স্থানান্তর করা যায়। এটি দিয়ে ড্রইং করা যায়।
Pen Tool: যেকোনো ধরনের অবজেক্ট ও শেপ তৈরি করা যায়। অর্থাৎ সোজা ও আঁকাবাঁকা লাইন তৈরি করা যায়।

Type Tool: এটি দিয়ে টেক্সট বক্সে কিছু লিখা ও এডিট করা যায়।
Rectangle Tool: এর সাহায্যে চতুর্ভুজ অঙ্কন করা যায়। এছাড়া এর ড্রপ ডাউন মেন্যুর সাহায্যে বৃত্তাকার, স্টার ইত্যাদি বিভিন্ন শেপ অঙ্কন করা যায়।

Paintbrush Tool: পেইন্ট করা, লাইন ও ছবি আঁকতে এই টুল ব্যবহৃত হয়।
Pencil Tool: পেন্সিলের মত এটি দিয়ে ছবি আঁকা যায়।

Gradient Tool: বহু রং মিশ্রিত অবজেক্ট বানানো যায় এবং রঙ্গের সংমিশ্রণে শেড তৈরি করা যায়।
Mesh Tool: এর সাহায্যে যেকোনো স্থানে শেড আনা যায়।

Eyedropper Tool: অবজেক্ট এর কোনো একটি অংশের রং অন্যত্র প্রয়োগ করা যায়।
Blend Tool: একাধিক অবজেক্ট এর মধ্যে রং ও শেপের সংমিশ্রণ ঘটাতে এই টুলের সাহায্য নিতে হয়


কাজ-৩: ইলাস্ট্রেটরে বিভিন্ন ধরনের shape drawing করা, rotate করা এবং reflect tool এর ব্যবহার

ইলাস্ট্রেটরে বিভিন্ন ধরনের shape drawing করা

  • প্রথমে রেক্টাঙ্গোলার শেপটুলটি নিই, দুটি আয়ত ড্র করি (একটি আয়ত অন্যটিকে স্পর্শ করবে)
  • এবার window মেন্যু থেকে পাথফাইন্ডার নিই। দুটি আয়ত সিলেক্ট করি। পাথফাইন্ডারে শেপ মুডে যে কয়টি অপশন রয়েছে তা অনুশীলন করি। চার নম্বর যে অপশনটি রয়েছে তার সাহায্যে নিচের কাজটি করি।
  • অবজেক্ট মেন্যু থেকে আনগ্রুপ করে দুটি শেপকে আলাদা করলে পাশের চিত্রের মত দেখাবে।
  • এরপর রাউন্ডেড আয়ত টুল এবং ইলিপস টুল নিয়ে বিভিন্ন আকার আকৃতি তৈরির চেষ্টা করি।
  • পাথফাইন্ডারে নিচের দিকে যে অপশনগুলো রয়েছে সেগুলোর অনুশীলন করি।
  • ডানদিকের চিত্রের মত করে বা অন্য কিছু বানানোর চেষ্টা করি।

কাজ-৪: ইলাস্ট্রেটরে rotate tool এর সাহায্যে shape rotate করা
  • স্টার টুলের সাহায্য নিয়ে একটি স্টার ড্র করি;
  • অবজেক্ট মেন্যু থেকে ট্রান্সফরম-এ যাই এর পর রোটেট সিলেক্ট করি;
  • অ্যাংগেল এর ঘরে কত ডিগ্রি রোটেট করতে চাই তা নির্বাচন করে দিই;
  • কপিতে ক্লিক করি। ঐ পরিমাণ রোটেট হয়ে আরেকটি কপি হবে।

কাজ-৫: ইলাস্ট্রেটরে reflect tool এর ব্যবহার
  • প্রথমে ইলিপস টুলের সাহায্যে বৃত্ত ড্র করি। বৃত্তটি কপি করে মাঝ বরবার একটি আয়ত ড্র করে পাথফাইন্ডারের সাহায্য নিয়ে কেটে নেই।
  • অবজেক্ট মেন্যু থেকে ট্রান্সফরম-এ যাই এর পর রিফ্লেক্ট সিলেক্ট করি;
  • এখানে horizontal, vertical এবং angel এই তিনটি বিষয় মাথায় রাখব;
  • ভাটিক্যাল সিলেক্ট করি, অ্যাংগেল ৯০ ডিগ্রি করি। কপিতে ক্লিক করব;
  • পাশের চিত্রের মত অবজেক্ট তৈরি হবে;
  • এবার দুটো অংশকে এক করে দিলে আবার পূর্ণাঙ্গ বৃত্ত পেয়ে যাব;
  • ফাইল মেন্যুতে ক্লিক করব।

সেশন-৮: নিজেদের পরিকল্পনার পোস্টার ডিজাইন করি (ব্যবহারিক)

অনলাইন গ্রাফিক্স সফটওয়্যার দিয়েও আমাদের পরিকল্পনা উপস্থাপনের জন্য পোস্টারের ডিজাইন তৈরি করতে পারি। অনলাইনে ক্যানভা (Canva) বা এরকম আরো অনেক ফ্রি সফটওয়্যার রয়েছে যেখানে টেমপ্লেট বা ডিজাইন দেওয়াই থাকে, শুধুমাত্র তথ্য ও ছবি যুক্ত করলেই চলে।

আমাদের সুবিধাজনক সফটওয়্যার ব্যবহার করেই পরিকল্পনা উপস্থাপনার পোস্টার প্রণয়ন করব। সফটওয়্যার ব্যবহার করে পোস্টার প্রণয়ন সম্ভবনা হলে পোস্টার কাগজে আকর্ষণীয় ডিজাইন করেও আমাদের পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে পারব।


আরও দেখুন: তথ্য যাচাই অভিযান – ৮ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি শিখন অভিজ্ঞতা ১
আরও দেখুন: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি – ৮ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি শিখন অভিজ্ঞতা ২


আশাকরি “নাগরিক সেবা ও ই-কমার্সের সুযাগ গ্রহণ করি – ৮ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি শিখন অভিজ্ঞতা ৩” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ ও সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।

Leave a Comment