পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ২য় অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন

পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ২য় অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন: ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি সৃষ্টি হয়। মুসলিম জাতীয়তাবাদ ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির ভিত্তি। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকেই পূর্ব বাংলার বাঙালি জনগণের মোহ ভঙ্গ হতে থাকে। ফলে বাঙালি জনগণের মধ্যে ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটতে থাকে।

১৯৭১ সালে এ রাষ্ট্রের পূর্ব অংশ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। এত কম সময়ের মধ্যে কেন পাকিস্তান রাষ্ট্রটি দ্বিখণ্ডিত হলো? কেন পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রথম সংবিধান প্রণয়নে ৯ বছর সময়ের প্রয়োজন হয়? কেন পাকিস্তান রাষ্ট্রের শুরুতেই বাঙালিদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার অভিযোগ ওঠে? এ অধ্যায়ে এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের স্বরূপ, বাঙালিদের প্রতি শাসকগোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গি, বাঙালিদের সার্বিক অবস্থা ইত্যাদি সম্বন্ধে ধারণা ব্যক্ত করা হয়েছে।


পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ২য় অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন

১. যুক্তফ্রন্ট বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: যুক্তফ্রন্ট বলতে ১৯৫৩ সালের ১৪ই নভেম্বর আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম এবং গণতন্ত্রী দলের সমন্বয়ে গঠিত পূর্ব বাংলার একটি নির্বাচনি জোটকে বোঝায়। মুসলিম লীগের নেতৃত্বাধীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করে এ অঞ্চলের জনগণকে কোণঠাসা করে রাখে। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পূর্ব পাকিস্তানে নেতৃবৃন্দ আলাদা প্ল্যাটফরমের স্থা ভাবতে থাকে।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের কথা ঘোষিত হলে পূর্ব বাংলায় মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয় ঘটানোর লক্ষ্যে শেরে বাংলার কৃষক-শ্রমিক পার্টি, আওয়ামী মুসলিম লীগ, নিজাম-ই ইসলাম ও গণতন্ত্রী দলের সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট নামে একটি নির্বাচনি জোট গঠন করা হয়। এ জোটই ঐতিহাসিক যুক্তফ্রন্ট নামে পরিচিত।

২. ভাষা আন্দোলন বলতে কী বোঝ?

উত্তর: ভাষা আন্দোলন বলতে ভাষার দাবিতে সাধারণত যে আন্দোলন করা হয় তাকে বোঝায়। বাংলাকে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি পূর্ব বাংলায় যে সর্বাত্মক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল তাই ভাষা আন্দোলন নামে পরিচিত।

তাছাড়া পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলা ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষার জন্য এত লোকের জীবন দেওয়ার ইতিহাস আর কোথাও নেই। একমাত্র বাঙালিরাই পারে ভাষা আন্দোলনের জন্য জীবন দিতে। তাই আমাদের ভাষা দিবসকে সারাবিশ্ব আজ শ্রদ্ধাভরে পালন করছে।

৩. ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ১৯৬৯ সালে যে আন্দোলন সংঘটিত হয় ইতিহাসে তা উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান নামে পরিচিত। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬ দফা দাবি পেশ করেন। পূর্ব পাকিস্তানে ৬ দফাভিত্তিক আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামি করে মোট ৩৫ জন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আগরতলা মামলা দায়ের করেন।

তারপর ছাত্রসমাজ পাকিস্তান সামরিক সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে বিশেষ করে আগরতলা মামলা প্রত্যাহারসহ ওই মামলার সকল আসামির বিনাশর্তে মুক্তি ও অন্যান্য যৌক্তিক দাবিতে ১৯৬৯ সালে ৫ই জানুয়ারি ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। এক পর্যায়ে ছাত্রদের সাথে সাধারণ জনগণও যোগ দিলে ছাত্রজনতার এই আন্দোলন গণঅভ্যুত্থান রূপ নেয়। ইতিহাসে এ গণঅভ্যুত্থানই ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান নামে পরিচিত।

৪. আগরতলা মামলা বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে তৎকালীন সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে মোট ৩৫ জন বাঙালি সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে মামলা দায়ের করে। ইতিহাসে এ মামলা ঐতিহাসিক “আগরতলা মামলা” নামে পরিচিত। ১৯৬৬ সালের ৬ দফাভিত্তিক বাঙালির জাতীয় জাগরণকে চিরতরে নস্যাৎ করার জন্য পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে।

ছয় দফা আন্দোলনের জন্য রাষ্ট্র ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার’ অভিযোগে অভিযুক্ত ও দেশরক্ষা আইনে আটক শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৯৬৮ সালে ১৭ই জানুয়ারি বেকসুর খালাস প্রদান করলেও ১৮ই জানুয়ারি গেটের বাইরে পা রাখার সাথেই তাকে ‘পাকিস্তান আর্মি, নেভী এবং এয়ারফোর্স এ্যাক্ট’-এ গ্রেপ্তার করে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কুর্মিটোলা সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। এ মামলার আনুষ্ঠানিক নাম ছিল “রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য।”

৫. ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার কারণে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ যে আন্দোলন গড়ে তুলে তা ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন বলে অভিহিত করা হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানি ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী অধিবেশন আহ্বান ও ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে।

১৯৭১ সালের ১লা মার্চ ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারে নিষ্পেষিত বাংলার সর্বস্তরের মানুষ এ আন্দোলনে যোগ দেয় এবং সমগ্র দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

৬. কেন ভাষা আন্দোলন হয়েছিল?

উত্তর: মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ভাষা আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর শুরুর দিকেই পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে পূর্ব বাংলার বিরোধ সৃষ্টি হয় রাষ্ট্রভাষাকে কেন্দ্র করে।

পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আমলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ নানাভাবে উর্দুকে (৩.২৭% লোকের ভাষা) পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার জোর প্রচেষ্টা চালায়। এ অবস্থায় পাকিস্তানের ৫৬.৪০% লোকের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলন সংঘটিত হয়।

৭. ছয় দফাকে বাঙালির মুক্তির সনদ বলা হয় কেন?

উত্তর: ছয় দফায় পূর্ব বাংলার জনগণের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিকসহ সকল অধিকারের কথা ছয় দফা কর্মসূচি বাঙালির জাতীয় চেতনামূলে বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতার কথা বলা না হলেও এ ছয় তুলে ধরা হয় বিধায় ছয় দফাকে বাঙালির মুক্তির সনদ বলা হয়। ৬ দফা কর্মসূচি বাঙালিদের স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। পাকিস্তান সরকার এটি গ্রহণ না করে দমনপীড়ন শুরু করলে আন্দোলন অনিবার্য হয়ে ওঠে। তাই ৬ দফাকে বাঙালির মুক্তির সনদ বলা হয়।

৮. ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন সম্পর্কে কী জান?

উত্তর: ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন। ১৯৫১ সালে প্রদেশসমূহে নির্বাচনের কথা থাকলেও আরও তিন বছর পর অর্থাৎ ১৯৫৪ সালের ১০ই মার্চ নির্বাচন হয়। এ নির্বাচন ছিল সর্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম প্রাদেশিক নির্বাচন।

এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট নামে একটি ঐক্যজোট গঠন করা হয়। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনি প্রতীক ছিল নৌকা। এ নির্বাচনে মোট আসন ছিল ৩০৯টি। এ নির্বাচনে শতকরা ৩৭.১৯ ভাগ ভোটার ভোট প্রদান করে। তবে এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসনে বিজয় অর্জন করে।

৯. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বলতে কী বোঝ?

উত্তর: বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়ার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল বিধায় ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি শহিদ হয়েছিলেন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার ও শফিউর। এ ঘটনার পর পাকিস্তান সরকার বাংলাকে উর্দুর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

১৯৫৩ সাল থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস হিসেবে দেশব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। ১৯৯৯ সালের ১৭শে নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারি তথা শহিদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

১০. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয়ের কারণ কী ছিল?

উত্তর: যোগ্য নেতৃত্বের অভাব, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আমলাদের দৌরাত্ম্য ও অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপের কারণেই মূলত ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ পরাজিত হয়।। পাকিস্তান সৃষ্টির পর কেন্দ্রীয়ভাবে মুসলিম লীগ সরকার একক আধিপত্যের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে চেয়েছিল।

কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তা মেনে নেয়নি। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর পর রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি এবং দুর্নীতির কারণে সরকারের, অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। এসব কারণে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জনগণ মুসলিম লীগকে প্রত্যাখ্যান করে।

১১. কী উদ্দেশ্যে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়?

উত্তর: ক্ষমতাসীন মুসলীম লীগকে নির্বাচনে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ পূর্ব বাংলার জনগণের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করতে থাকে। মুসলিম লীগের অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ-নির্যাতন উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পেতেই থাকে।

পূর্ব বাংলার রাজনীতিবিদগণ উপলব্ধি করেন, মুসলিম লীগকে ক্ষমতা থেকে হঠানো ব্যতীত তাদের মুক্তি মিলবে না। আর এরজন্য পূর্ব বাংলায় রাজনৈতিক ঐক্যের বিকল্প নেই। তাই ১৯৫৪ সালের পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করতেই প্রধান চারটি দলের সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়।

১২. ৭ই মার্চের ভাষণের তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: ৭ই মার্চের ভাষণের তাৎপর্য হলো এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরোক্ষভাবে বাংলার স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ, এক স্মরণীয় দলিল। প্রায় ১৮ মিনিটের তেজস্বী ৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বাঙালি জাতির সামনে একটি গন্তব্য নির্ধারিত হয় যার নাম হলো স্বাধীনতা।

এ ভাষণে বঙ্গবন্ধু প্রতিরোধ সংগ্রাম, যুদ্ধের কৌশল ও শত্রু মোকাবিলার উপায় সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা দেন। এ ভাষণ বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। দেশমাতৃকার স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এ ভাষণের তাৎপর্য অনেক।

১৩. আগরতলা মামলা কেন দায়ের করা হয়?

উত্তর: বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা কর্মসূচিকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্য আগরতলা মামলা দায়ের করা হয়। আগরতলা মামলা বাঙালি জনগণ ও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র ও দমননীতির বহিঃপ্রকাশ। স্বৈরাচারী আইয়ুব-মোনায়েম সরকার শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগকে জনবিচ্ছিন্ন করার জন্য এই মামলার নীলনকশা তৈরি করে।

তারই ফলশ্রুতিতে ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে আরও ৩৪ জন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনে। এই মামলায় শেখ মুজিবকে ‘পাকিস্তানের শত্রু’ এবং ‘ভারতের দালাল’ বলে প্রচার করা হয়।

১৪. মুজিবনগর সরকারের গঠন লেখ।

উত্তর: মুক্তিযুদ্ধকে গতিময় ও সুসংহত করার জন্য ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার বা প্রবাসী সরকার গঠন করা হয়। মুজিবনগর সরকারের গঠন হলো ১. রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান; ২. উপ-রাষ্ট্রপতি ৩. প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ; ৪. পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোস্তাক আহমেদ;

৫. অর্থমন্ত্রী আলী; ৬. স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামান: ৭. প্রধান সেনাপতি ওসমানী; ৮. ডেপুটি চীফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার; ৯. সৈয়দ নজরুল ইসলাম; ১০. ক্যাপ্টেন এম মনসুর জেনারেল এম এ জি ওসমানী।

১৫. বাঙালির ম্যাগনাকার্টা বলা হয় কোন কর্মসূচিকে এবং কেন?

উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা কর্মসূচিকে বাঙালির ম্যাগনাকার্টা বলা হয়। ছয় দফা দাবি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক এবং স্বভাবতই এর প্রতি তাদের সমর্থন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। তাছাড়া জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটার ক্ষেত্রে ছয় দফার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। কারণ এটা ছিল শোষকের হাত হতে শোষিতের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ছিনিয়ে আনার হাতিয়ার।

আর সত্তরের নির্বাচন ছিল মূলত ছয় দফা তথা প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের ওপর জনমত যাচাইয়ের অপূর্ব সুযোগ। তাই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভের পেছনে ছয় দফা কর্মসূচির ছিল জোরালো আবেদন। এসব কারণেই ছয় দফাকে বাঙালির ম্যাগনাকার্টা বলে আখ্যায়িত করা হয়।

১৬. ছাত্রদের ১১ দফার গুরুত্বপূর্ণ দুটি দাবি উল্লেখ কর।

উত্তর: তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ পাকিস্তান সামরিক সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে বিশেষ করে স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯৬৯ সালের ৫ই জানুয়ারি ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। ১১ দফা কর্মসূচির দুটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি হলো- ১. ৬ দফার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রদান। ২. ব্যাংক, বিমা ও বৃহৎ শিল্প জাতীয়করণ করা।

১৭. ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন জারি সম্পর্কে কী জান?

উত্তর: ১৯৫৮ সালে দুই বার সামরিক শাসন জারি করা হয়। ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা তদানীন্তন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আইয়ুব খানের সহযোগিতায় পাকিস্তানের সামরিক শাসন জারি করেন। একই বছর জেনারেল আইয়ুব খান ২৭ই অক্টোবর ইস্কান্দার মির্জাকে সরিয়ে নিজেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। এভাবেই শুরু হয়েছিল পাকিস্তানে সামরিক শাসন।

১৮. ছয়-দফা কর্মসূচির একটি দফা ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের লাহোরে ‘ছয় দফা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। ছয় দফার প্রথম দফাটি ছিল সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত। এ দফায় বলা হয়েছিল লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণীত হবে, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোভিত্তিক ও সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা চালু করা হবে, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারগুলো সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে গঠিত হবে। তাছাড়া এ দফাটিতে সংবিধানে জনগণের পূর্ণ মৌলিক অধিকার রক্ষা করার কথাও বলা হয়েছিল।

১৯. ভাষা আন্দোলনকে কেন বাঙালির মুক্তির প্রথম আন্দোলন বলা হয়?

উত্তর: ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি তাদের অধিকার আদায় সম্পর্কে সচেতন হয় বিধায় ভাষা আন্দোলনকে বাঙালির মুক্তির প্রথম আন্দোলন বলা হয়। ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু করে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বাঙালি তাদের ভাষার দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করে। তারা একমাত্র উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্তকে রুখে দিয়ে বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে। এক্ষেত্রে এদেশের জনগণ তাদের জীবন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। পাকিস্তান সৃষ্টির পর এটিই বাঙালিদের প্রথম আন্দোলন।

২০. ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ থেকে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ গঠন করা হয় কেন?

উত্তর: অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক মনোভাবের উদ্দেশ্যে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ গঠন করা হয়। ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করা হয়। কিন্তু পূর্ব বাংলায় তখন মুসলমানরা ছাড়াও হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মের লোকও বাস করত।

পূর্ব বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সকল ধর্মের লোকেরই ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন ছিল। তাই ১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শ ধারণ করে দলকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ গঠন করা হয়।

২১. ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রীয় শাসন জারি করা হয় কেন?

উত্তর: পূর্ব বাংলার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বাঙালি ও অবাঙালি ওয়ার্ডনদের মধ্যে দাঙ্গা, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের বিরুদ্ধে ‘ভারতের চর ও দেশদ্রোহিতার’ অভিযোগ প্রভৃতির কারণে ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রীয় শাসন জারি করা হয়। ১৯৫৪ সালের মে মাসে ফজলুল হক কলকাতায় গিয়ে যে বক্তব্য রাখেন তা পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না।

এছাড়া আদমজী জুট মিল ও চন্দ্রঘোনা পেপার মিলে বাঙালি ও বিহারি শ্রমিকদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়। এতে বহু শ্রমিক নিহত হয়। ফলে ১৯৫৪ সালের মে মাসে ৯২-ক ধারা অনুযায়ী পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রীয় শাসন জারি করা হয় এবং মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জাকে পূর্ব বাংলার গভর্নর করে পাঠানো হয়।


আরও দেখুন: পৌরনীতি ও সুশাসন সকল অধ্যায় সমাধান

আশাকরি “পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ২য় অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ ও সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।

Leave a Comment