পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৪র্থ অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন: সংবিধান রাষ্ট্র পরিচালনার বিধিবিধান সংবলিত পবিত্র দলিল। সংবিধান একটি রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবি বা দর্পণ। একটি রাষ্ট্রের গঠনকাঠামো কী রকম হবে, কোন ধরনের সরকার পদ্ধতি চালু থাকবে, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে কিভাবে ক্ষমতা বণ্টিত হবে, সরকার ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক কিরূপ হবে ইত্যাদি বিষয়ে কতগুলো নিয়মনীতি রয়েছে। এসব নিয়ম-কানুনের সমষ্টিই হলো সংবিধান। সব ধরনের সরকারের ভিত্তি হলো সংবিধান। সংবিধান কতগুলো মৌলিক আইনের এক দলিল।
সংবিধান লিখিত হতে পারে আবার অলিখিতও হতে পারে। সংবিধান রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে। নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা করে। সংবিধান ছাড়া রাষ্ট্র কল্পনা করা যায় না। বাংলাদেশের সংবিধান লাখো শহিদের স্বপ্নে উল্লসিত রক্তের অক্ষরে লেখা এক পবিত্র দলিল। বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘ সংগ্রামের সাফল্যের ফসল এ সংবিধান।
পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৪র্থ অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন
১. মৌলিক অধিকার কেন প্রয়োজন?
উত্তর: মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকা এবং সুস্থ, সুন্দরভাবে জীবন পরিচালনার জন্য মৌলিক অধিকার প্রয়োজন। যেসব অধিকার পূরণ ব্যতীত মানুষের বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে তা-ই মৌলিক অধিকার। যেমন- খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান, চলাফেরা, কথা বলার অধিকার প্রভৃতি। এসব অধিকার পূরণ ছাড়া নাগরিকগণ সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে না। তাই বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫নং অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার পূরণের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে।
২. মৌলিক অধিকার বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: মৌলিক অধিকার হলো রাষ্ট্র প্রদত্ত সেসব অধিকার বা সুযোগ-সুবিধা যা নাগরিকদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য বাংলাদেশ সংবিধানের ২৬ নং অনুচ্ছেদ থেকে ৪৭(ক) পর্যন্ত মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ আছে। মৌলিক অধিকার হচ্ছে নাগরিক জীবন ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য শক্তিশালী অধিকার যা সার্বভৌম সংবিধানে সন্নিবেশিত এবং সরকারের পক্ষে অলঙ্ঘনীয়।
৩. দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: যে সংবিধান সহজে পরিবর্তন করা যায় না তাকেই দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান বলে। বাংলাদেশের সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এটি দুষ্পরিবর্তনীয় প্রকৃতির। সংবিধানের কোনো ধারা বা অংশ পরিবর্তন করতে বিশেষ পদ্ধতির অনুসরণ করতে হয়, যা সংবিধানের দশম ভাগে উল্লেখ আছে। সংবিধানের কোনো ধারা বা বিধানসমূহ পরিবর্তন, সংশোধন বা রহিতকরণের জন্য জাতীয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোট প্রয়োজন হয়।
৪. রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলতে কী বোঝ?
উত্তর: রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলতে কতকগুলো মৌলিক নীতিকে বোঝায়। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো হলো কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। এসব রাষ্ট্রগুলোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এর কতকগুলো মূলনীতি নির্ধারণ করা হয়। যেমন- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এগুলো বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি। সরকার এই মূলনীতি অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে। এ নীতিগুলোই হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি।
৫. সংসদীয় গণতন্ত্র বলতে কী বোঝ?
উত্তর: সংসদীয় গণতন্ত্র বলতে এমন এক ধরনের শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে প্রধানমন্ত্রী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী। সংসদীয় গণতন্ত্রে শাসন বিভাগ বা নির্বাহী বিভাগ তাদের গৃহীত নীতি ও সিদ্ধান্ত বা কাজকর্মের জন্য আইন বিভাগের নিকট দায়বদ্ধ। কারণ তারা একই সাথে শাসন এবং আইনের বিভাগের সদস্য। এছাড়া সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান এবং প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী হলো মন্ত্রিপরিষদ।
৬. বাংলাদেশ সংবিধানের যেকোনো একটি রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বাংলাদেশ সংবিধানের একটি মূলনীতি হলো গণতন্ত্র। সংবিধানের ১১নং অনুচ্ছেদে বলা হয়, প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র। যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে। প্রশাসনের সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের সর্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত হবে। সমাজজীবন হতে সর্বপ্রকার বৈষম্য দূরীভূত করে নাগরিকদের মৌলিক মানবিক অধিকার এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান করা হবে।
৭. পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ সংবিধানের মূলনীতিতে কী পরিবর্তন আনা হয়েছিল?
উত্তর: পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ সংবিধানের ৪টি মূলনীতির মধ্যে গণতন্ত্র ছাড়া বাকি তিনটিতেই পরিবর্তন আনা হয়েছিল। পঞ্চম সংশোধনীতে বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের কথা বলা হয়। ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আনা হয়। পঞ্চম সংশোধনীতে সমাজতন্ত্রকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার হিসেবে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি করা হয়।
৮. বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মূল বিষয়বস্তু কী ছিল? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মূল বিষয়বস্তু ছিল সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন। বাংলাদেশের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে দ্বাদশ সংশোধনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সংশোধনীর ফলে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবর্তিত রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার অবসান ঘটে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। তাছাড়া এ আইন পাশের ফলে রাষ্ট্রপতি নিয়মতান্ত্রিক শাসকে পরিণত হন।
৯. ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির প্রতি বিশেষ সুযোগ-সুবিধা বা তার প্রতি কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ ব্যবহার করা হবে না। কোনো বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা না করে সব ধর্মের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করাই ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় জনগণের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ধর্মের অপব্যবহার বিলোপ করা হবে। প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী ধর্ম পালন, চর্চা ও প্রচার করতে পারবে।
১০. বাংলাদেশ সংবিধান কীভাবে সংশোধন করা যায়?
উত্তর: জাতীয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ সংবিধান সংশোধন করা যায়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান হচ্ছে দুষ্পরিবর্তনীয়। এই সংবিধানকে পরিবর্তন করতে হলে একটা বিশেষ পদ্ধতির প্রয়োজন হয়। এই পদ্ধতিটি বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪২নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে। আর সে পদ্ধতি অনুযায়ী দুই- তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যদের সমর্থন ভোটে সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী প্রস্তাব পাশ করা হয়। এভাবে বাংলাদেশ সংবিধান সংশোধন করা যায়।
আরও দেখুন: পৌরনীতি ও সুশাসন সকল অধ্যায় সমাধান
আশাকরি “পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৪র্থ অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ ও সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।