পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৫ম অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন

পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৫ম অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন: ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার চালু ছিল। এ সময় রাষ্ট্রপতি নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। প্রকৃত নির্বাহী ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রবর্তিত হয়। এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান হিসেবে সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী হন।

১৯৯১ সালে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী অনুযায়ী দেশে পুনরায় সংসদীয় বা মন্ত্রিসভা শাসিত সরকার প্রবর্তিত হয়। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী সরকার ব্যবস্থার মধ্যমণি হিসেবে রাষ্ট্রের নির্বাহী কর্তৃত্ব লাভ করেন। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী ও তার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করছেন। কিন্তু সরকার বলতে শুধু প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভাকে বোঝায় না। জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভা, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, জাতীয় সংসদ, দেশরক্ষা বিভাগসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়ে সরকার গঠিত। তাই পৌরনীতির আলোচনায় বাংলাদেশের সরকার ও প্রশাসনিক কাঠামোর বিবরণ বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়।


পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৫ম অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন

১. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত থেকে বিচারকদের স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করার ক্ষমতাকে বোঝায়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নির্ভর করে বিচারকদের নিয়োগ পদ্ধতি, চাকরির নিরাপত্তা, বেতন, পদমর্যাদা এবং বিচারকদের দক্ষতা, জ্ঞান ও সাহসিকতার ওপর।

কোনো রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না তা বিচারের মাপকাঠি হলো সে দেশের বিচার বিভাগের উৎকর্ষতা। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা সমাজব্যবস্থার প্রধান স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধান ও আইন সংরক্ষণে খুবই জরুরি।

২. শাসন বিভাগ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: রাষ্ট্রের শাসনকার্য তথা নিত্যদিনকার প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজ পরিচালনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং রাষ্ট্রের সার্বিক সিদ্ধান্ত এবং সুবিধাসমূহ বাস্তবায়ন করে যে বিভাগ তাকে শাসন বিভাগ বলে। সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে শাসন বিভাগ অন্যতম। আইন বিভাগ প্রণীত আইন বাস্তবে প্রয়োগ করাই শাসন বিভাগের প্রধান কাজ। শাসন বিভাগকে নির্বাহী বিভাগও বলা হয়ে থাকে। তবে শাসন বিভাগ মূলত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ নিয়ে গঠিত হয়।

৩. বাংলাদেশের আইনসভার গঠন লেখ।

উত্তর: বাংলাদেশের আইনসভা ৩৫০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে, জাতীয় সংসদ ৩৫০ জন সদস্যের মধ্যে ৩০০ জন সদস্য একক আঞ্চলিক, নির্বাচনি এলাকাসমূহ হতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। এছাড়া ৫০টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। তারা সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন। সংসদের কার্য পরিচালনার জন্য সংসদ সদস্যদের ভোটে একজন স্পিকার ও একজন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন।

৪. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেন প্রয়োজন?

উত্তর: ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রয়োজন। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা সমাজব্যবস্থার স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে এবং জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করে।

বিচার বিভাগের ওপর আইন ও শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ থাকলে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। নাগরিক অধিকার সুরক্ষা এবং নাগরিকের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

৫. বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা ক্ষমতা বলতে কী বোঝ?

উত্তর: আইনসভা কর্তৃক প্রণীত কোনো আইন কিংবা শাসন বিভাগের কাজ সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না তা বিচার বিভাগ কর্তৃক পর্যালোচনা করার ক্ষমতাই হলো বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা। বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা ধারণাটির উদ্ভব হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক ও ব্যাখ্যাকার। সংবিধানের অভিভাবক ও রক্ষাকারী হিসেবে বিচার বিভাগ এর শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সচেষ্ট থাকে।

বিচার বিভাগের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে, আইনসভা কর্তৃক প্রণীত কোনো আইন সংবিধানের সাথে অসংগতিপূর্ণ, তাহলে তা বাতিল করার ক্ষমতা বিচার বিভাগের রয়েছে। তেমনি শাসন বিভাগের কোনো কাজ সংবিধানসম্মত না হলে বিচার বিভাগ তা অবৈধ ঘোষণা করতে পারে। সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্ব ও পবিত্রতা বজায় রাখতে বিচার বিভাগ এ ক্ষমতা প্রয়োগ করে।

৬. বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদের গঠন বর্ণনা কর।

উত্তর: একজন প্রধানমন্ত্রী ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের নিয়ে বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়। বাংলাদেশ সংবিধানের ৫৫(১) অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি মন্ত্রিসভা থাকবে এবং প্রধানমন্ত্রী ও সময়ে সময়ে তিনি যেরূপ স্থির করবেন, সেরূপ অন্যান্য মন্ত্রী নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠিত হবে।

অর্থাৎ সাধারণ নির্বাচনের পর রাষ্ট্রপতি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী তিনি অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নিয়োগ দিবেন। উল্লেখ, মন্ত্রিপরিষদে এক-দশমাংশ সদস্য নির্বাচিত সদস্যদের বাইরে থেকে নিয়োগ করা যাবে। জাতীয় সংসদের আস্থা হারালে মন্ত্রিপরিষদকে পদত্যাগ করতে হবে।

৭. সচিবালয় বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: বাংলাদেশে মন্ত্রণালয়গুলোকে যৌথভাবে ‘সচিবালয়’ বলা হয়। সচিবালয় হচ্ছে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু। সচিবালয়কে কেন্দ্র করেই প্রশাসন ব্যবস্থা আবর্তিত হয়। সচিবালয় হচ্ছে সকল ক্ষমতার আধার। এটি মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বিত রূপ। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে একজন সচিব থাকেন। সচিবালয়ে সরকারের যাবতীয় নীতি প্রণীত হয়, পর্যালোচিত হয় এবং চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়।

৮. জাতীয় সংসদের ‘কোরাম’ সম্পর্কে কী জান?

উত্তর: সংসদের অধিবেশন ন্যূনতম যে পরিমাণ সদস্যের উপস্থিতিতে পরিচালনা করা যায় তাকে কোরাম বলে। কোরাম শব্দের অর্থ ন্যূনতম উপস্থিতি সংখ্যা। বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে কমপক্ষে ৬০ জন সদস্যের উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদের কাজ পরিচালনা করা হয়।

তবে জাতীয় সংসদের বৈঠক চলাকালে কোনো সময়ে যদি উপস্থিত সদস্য সংখ্যা ষাটের (৬০) কম হয় তাহলে সভাপতি/স্পিকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। এ সময়ে স্পিকার অন্যূন ৬০ জন সদস্য উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত বৈঠক স্থগিত রাখবেন। এ পরিস্থিতিই জাতীয় সংসদের কোরাম সংকট বলে বিবেচিত।

৯. অর্থবিল বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: অর্থবিল হচ্ছে সেই বিল যাতে কর ধার্য বা পরিবর্তন, ঋণ গ্রহণ বা ঋণ পরিশোধ, ব্যয়ের মঞ্জুরি প্রভৃতি আলোচিত হয়। কোনো বিল অর্থবিল কি না তা নির্ধারণ করেন সংসদের স্পিকার। এ বিষয়ে তার মতামতই চূড়ান্ত। তবে কোনো অর্থবিল রাষ্ট্রপতির সুপারিশ ব্যতীত জাতীয় সংসদে পেশ করা যাবে না। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি সংযুক্ত তহবিল হতে ব্যয় নির্বাহের ব্যবস্থা করতে পারবেন।

১০. অভিশংসন বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: অভিশংসন বলতে সাংবিধানিক পদের অধিকারী কোনো ব্যক্তিকে পদচ্যুত করা হবে কি না সে উদ্দেশ্যে আয়োজিত সংসদীয় বিচারকে বোঝায়। সংবিধানের কোনো ধারা লঙ্ঘন, গুরুতর অপরাধ বা অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করা যাবে।

এজন্য সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের স্বাক্ষরে অনুরূপ অভিপ্রায় ও অভিযোগের বিবরণ লিপিবদ্ধ করে একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পিকারের নিকট প্রদান করতে হবে। অভিযোগ বিবেচনার পর জাতীয় সংসদ সাংবিধানিক পদের অধিকারী ব্যক্তিকে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের সমর্থনে অভিশংসন করতে পারে। তখন তার পদ শূন্য হবে।


আরও দেখুন: পৌরনীতি ও সুশাসন সকল অধ্যায় সমাধান

আশাকরি “পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৫ম অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ ও সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।

Leave a Comment