পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন

পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন: আধুনিক গণতন্ত্রের মৌল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রশাসন যন্ত্রের সর্বস্তরে জনগণের অংশগ্রহণ। আজকের প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রে’ প্রশাসনের সর্বস্তরের নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জনপ্রতিনিধিগণই মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। রাষ্ট্রের উদ্ভবের পর। থেকেই লক্ষ করা গেছে যে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে কেন্দ্রীভূত করে রাখাই হচ্ছে প্রধান প্রবণতা। কিন্তু জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিস্ত তির সাথে সমন্বয় সাধন করতে গিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের অধিকতর জনসম্পৃক্তির জন্য বর্তমান যুগে প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।

বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কেন্দ্রীয় শাসন, প্রাদেশিক শাসন এবং সর্বনিম্ন পর্যায়ে গ্রাম বা শহরের এলাকাভিত্তিক শাসন লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশেও একদিকে রয়েছে কেন্দ্রীয় শাসন, অপরদিকে রয়েছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে শহর এলাকা পর্যন্ত স্থানীয় পর্যায়ে কর্তৃত্বসম্পন্ন শাসনব্যবস্থা। বাংলাদেশে এলাকাভিত্তিক সীমিত কর্তৃত্বসম্পন্ন এই শাসনব্যবস্থা দুভাগে বিভক্ত। যথা: (ক) স্থানীয় শাসন ও (খ) স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন।


পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন

১. স্থানীয় সরকার বলতে কী বোঝ?

উত্তর: স্থানীয় সরকার বলতে একটি দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলভিত্তিক স্থানীয়ভাবে পরিচালিত শাসনব্যবস্থাকে বোঝায়। স্থানীয় সরকার হলো সরকারের প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের অংশ। সরকার কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে।

এ ব্যবস্থায় স্থানীয় শাসন কর্তৃপক্ষের কোনো স্বাধীনতা, স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ও নীতিনির্ধারণি ক্ষমতা থাকে না। তারা কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে এবং প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীনে দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশের বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসন হলো স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার উদাহরণ।

২. উপজেলা পরিষদের কাজ লেখ।

উত্তর: উপজেলা পরিষদের একটি অন্যতম কাজ হলো পাঁচসালা ও বিভিন্ন মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করা। উপজেলা পরিষদ একটি স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। এ সংস্থাটি প্রশাসন ও সংস্থাপন সংক্রান্ত যেসব কাজ সম্পন্ন করে তার মধ্যে রয়েছে-

পরিষদের নিকট হস্তান্তরিত বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং উক্ত দফতরের কর্মকাণ্ডের তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় করা, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করা, সরকার কর্তৃক প্রদত্ত কার্যাবলি সম্পাদন করা, ই-গভর্নেন্স চালু ও উৎসাহ প্রদান ইত্যাদি। এছাড়া উপজেলা পরিষদ জনশৃঙ্খলা রক্ষামূলক, জনকল্যাণ ও সেবামূলক, স্থানীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কার্যক্রম ইত্যাদি কার্যাবলি সম্পন্ন করে থাকে।

৩. পৌরসভার গঠন বর্ণনা কর।

উত্তর: জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত ২৫ জন সদস্য নিয়ে পৌরসভা গঠিত হয়। শহরকেন্দ্রিক স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন কাঠামোর মৌলিক একক হচ্ছে পৌরসভা। পৌরসভা গঠিত হয় একজন মেয়র এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক নির্বাচিত সদস্য নিয়ে। এ সদস্যদেরকে কাউন্সিলর বলা হয়। মেয়র ও কাউন্সিলর পৌর এলাকার ভোটারদের দ্বারা নির্বাচিত হন। একটি পূর্ণাঙ্গ পৌরসভায় ১৮টি ওয়ার্ড থাকে।

প্রত্যেকটি ওয়ার্ড থেকে একজন সদস্য এবং প্রতি তিনটি ওয়ার্ড থেকে একজন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। এছাড়াও পৌরসভার কাজ ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য একজন নির্বাহী কর্মকর্তা থাকেন। তিনি পৌরসভার কাজের সমন্বয় ও এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩২৭টি পৌরসভা রয়েছে।

৪. ইউনিয়ন পরিষদের গঠন বর্ণনা কর।

উত্তর: জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত ১৩ জন সদস্য নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয়। বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার ব্যবস্থার সর্বনিম্নস্তরের প্রশাসন ব্যবস্থা হলো ইউনিয়ন পরিষদ। ১৯৭৬ সালের বাংলাদেশ স্থানীয় শাসন অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী কয়েকটি গ্রাম নিয়ে একটি ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয়।

ইউনিয়নের ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত ১ জন চেয়ারম্যান, প্রতি ওয়ার্ড হতে একজন করে মোট ৯ জন পুরুষ সদস্য এবং তিনটি ওয়ার্ডে একজন করে নয়টি ওয়ার্ড থেকে ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত তিনজন মহিলা সদস্যসহ মোট ১৩ জন সদস্য নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ৪,৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে।

৫. উপজেলা পরিষদের গঠন পদ্ধতি কীরূপ? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: উপজেলা পরিষদ হলো স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ একক। উপজেলা পরিষদ একটি স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। এই সংস্থাটি একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান, একজন ভাইস চেয়ারম্যান, একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ এবং পৌরসভার মেয়র। এছাড়া ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের ১/৩ অংশের সমসংখ্যক মহিলা সদস্য বা কাউন্সিলর নিয়ে গঠিত হয়। বর্তমানে উপজেলা পরিষদের সংখ্যা ৪৯২টি।

৬. পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের গঠন সম্পর্কে লেখ।

উত্তর: ১৯৮৯ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে একটি আইন পাশ করে সরকার রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এ তিনটি জেলায় স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠন করে। রাঙামাটি জেলায় স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠিত হয় একজন চেয়ারম্যান, ২০ জন উপজাতীয় সদস্য ও ১০ জন অ- উপজাতীয় সদস্য নিয়ে।

খাগড়াছড়ি জেলায় স্থানীয় সরকার গঠিত হয় একজন চেয়ারম্যান, ২১ জন উপজাতীয় সদস্য ও ৯ জন অ-উপজাতীয় সদস্য নিয়ে। এছাড়া বান্দরবান জেলায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা একজন চেয়ারম্যান, ১৯ জন উপজাতীয় এবং ১১ জন অ-উপজাতীয় সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হয়। তবে প্রতিটি জেলা পরিষদের কার্যকাল হবে ৫ বছর।

৭. সিটি কর্পোরেশনের গঠন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: একজন মেয়র এবং এলাকা (ওয়ার্ড) ভিত্তিক নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নিয়ে সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয়। সিটি কর্পোরেশনগুলোর এলাকার জনসংখ্যার ভিত্তিতে সদস্য তথা কাউন্সিলরদের সংখ্যা নির্ধারিত হয়। প্রতি ওয়ার্ড থেকে একজন পুরুষ কাউন্সিলর এবং তিন ওয়ার্ড মিলে সংরক্ষিত মহিলা আসনে একজন মহিলা কাউন্সিলর জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। সিটি কর্পোরেশনের প্রধানকে মেয়র বলা হয়। মেয়র এবং কাউন্সিলরগণ পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন।

৮. ইউনিয়ন পরিষদের আয়ের প্রধান উৎস ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: ইউনিয়ন পরিষদের আয়ের প্রধান উৎসসমূহ হচ্ছে- বাড়িঘর, দালালকোঠার ওপর কর। সরকারি বরাদ্দের বাইরে ইউনিয়ন পরিষদের ব্যয় নির্বাহের জন্য বেশকিছু আয়ের উৎস রয়েছে। এগুলো হলো-

গ্রাম পুলিশ রেট; জন্ম, বিবাহ ও ভোজের ওপর ফি, সিনেমা, থিয়েটার, যাত্রা, সার্কাস, মেলা ইত্যাদির ওপর কর, যানবাহনের ওপর কর, লাইসেন্স, পারমিট ফি, জনস্বার্থে বিশেষ কল্যাণ কর বা কাজের জন্য ফি, হাটবাজার, জলমহাল, ফেরিঘাট, ইজারা ও টোল সংগ্রহ এবং সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বরাদ্দ অনুদান ইত্যাদি।

৯. ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিশেষ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে’- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিশেষ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে যা অন্যান্য স্থানীয় সরকার থেকে আলাদা। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বতন্ত্র পরিচয় প্রতিষ্ঠার জন্য সেখানকার জনসাধারণ দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে আসছিল। তাদের দাবির ফলেই ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে এ অঞ্চলে ভিন্ন প্রকৃতির স্থানীয় সরকার কাঠামো গড়ে উঠেছে।


আরও দেখুন: পৌরনীতি ও সুশাসন সকল অধ্যায় সমাধান

আশাকরি “পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ ও সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।

Leave a Comment