পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৭ম অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন: বিশ্বের প্রত্যেকটি রাষ্ট্রে কিছু সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশেও কিছু সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেগুলোর নিয়োগ পদ্ধতি, পদের মেয়াদ, পদত্যাগ ও অপসারণ পদ্ধতি, পদমর্যাদা এবং কার্যাবলি সংবিধানে সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। এ অধ্যায়ে আমরা বাংলাদেশ কর্ম কমিশন, নির্বাচন কমিশন, অ্যাটর্নি জেনারেল, মহা- হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন সম্পর্কে জানব।
পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৭ম অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন
১. সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বলতে কী বোঝ?
উত্তর: সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বলতে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সাংবিধানিক বিধিবিধানের আওতায় গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানসমূহকে বোঝায়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তার কাজের গতিশীলতার জন্য কতকগুলো প্রতিষ্ঠান তৈরি করে। যার ক্ষমতা ও কার্যাবলি সংবিধান অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট ও সুনিয়ন্ত্রিত।
এগুলোই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারে। বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন, নির্বাচন কমিশন, অ্যাটর্নি জেনারেল, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক।
২. কীভাবে সরকারি কর্মকমিশন যোগ্য প্রার্থী বাছাই করে?
উত্তর: সরকারি কর্মকমিশন পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করে। কমিশন সরকারি কাজে জনবল নিয়োগের জন্য উপযুক্ত লোকদের মনোনয়নের উদ্দেশ্যে পরীক্ষা পরিচালনা করে। কমিশন যোগ্য প্রার্থীর কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিরপেক্ষভাবে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করে নিয়োগের সুপারিশ করে।
৩. দুর্নীতি দমন কমিশন বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: প্রশাসন ও সমাজের দুর্নীতি দমন করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে সেটিই হলো দুর্নীতি দমন কমিশন। দুর্নীতি দমন কমিশন স্বশাসিত, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ একটি প্রতিষ্ঠান। এটি তিনজন কমিশনারের সমন্বয়ে গঠিত। এদের মধ্যে একজন হলেন চেয়ারম্যান। প্রত্যেকেই মনোনয়ন কমিটির সুপারিশক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হন। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে দুর্নীতি দমন কমিশন সব ধরনের আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারেন।
৪. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কীভাবে দুর্নীতি রোধ করে?
উত্তর: গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দুর্নীতি সংক্রান্ত তথ্যাদি ও ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে প্রচার করে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে দুর্নীতি রোধ করে থাকে। দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের পূর্বশর্ত হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করা।
দুর্নীতি সংক্রান্ত তথ্যাদি গণমাধ্যমে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরার ব্যবস্থা করতে হবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে। সেই সাথে প্রচার ও গণমাধ্যমের অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। তাই বলা যায়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মাধ্যমেই দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব।
৫. নির্বাচন কমিশন কীভাবে গঠিত হয়?
উত্তর: নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশের বিভিন্ন সাংবিধানিক নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সংবিধানের ১১৮নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গঠিত হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক ৪ জন কমিশনার নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। কমিশনারদেরকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগদান করবেন। নিয়োগের পর থেকে অনধিক পাঁচ বছর তারা নিজ দায়িত্ব পালন করবেন।
৬. বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা। প্রত্যেক রাষ্ট্রে সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সমাধানের জন্য একটি সরকারি কর্মকমিশন বা অনুরূপ সংস্থা থাকে। বাংলাদেশেও এরূপ একটি সংস্থা রয়েছে- যা ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন’ নামে পরিচিত। স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সংস্থা হিসেবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী প্রশাসনসংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব ও ক্ষমতা এ কমিশনের রয়েছে।
৭. সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ কেন সৃষ্টি করা হয়েছে?
উত্তর: অ্যাটর্নি জেনারেলের কাজে সহায়তা করার জন্য সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল বাংলাদেশ সরকারের প্রধান আইন কর্তকর্তা। তিনি আইনগত দিক দিয়ে রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষে আদালতে বক্তব্য পেশ করেন। তার কাজে সহযোগিতা ও সহায়তা করার জন্য সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ সৃষ্টি করা হয়।
অ্যাটর্নি জেনারেলের অনুপস্থিতিতে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সরকারের আইনবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আবার আইনের জটিলতার প্রশ্নে তিনি অনেক সময় অ্যাটর্নি জেনারেলকে পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করে থাকেন। আর এই কারণেই সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
৮. সরকারি কর্মকমিশনের মূল দায়িত্বগুলো কী কী?
উত্তর: সরকারি কর্মকমিশনের মূল দায়িত্বগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দায়িত্ব হলো- প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ দানের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদের মনোনয়নের উদ্দেশ্যে যাচাই ও পরীক্ষা পরিচালনা করা। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান।
এই প্রতিষ্ঠান সরকারি কর্মী নিয়োগ, ব্যবস্থাপনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করে থাকে। আবার, কোনো বিষয় সম্পর্কে কমিশনের পরামর্শ চাওয়া হলে বা কমিশনের দায়িত্ব সংক্রান্ত কোনো বিষয় কমিশনের নিকট প্রেরণ করা হলে সে সম্বন্ধে রাষ্ট্রপতিকে উপদেশ দান করে থাকে। এছাড়া সরকারি কর্মকমিশন আইনের দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্বও পালন করে থাকে।
৯. মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের ক্ষমতা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক জাতীয় অর্থের অভিভাবকরূপে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাব এবং সকল সরকারি কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারীর হিসাব নিরীক্ষা করেন;
অনুরূপ হিসাব সম্পর্কে রিপোর্ট দান করেন এবং সে উদ্দেশ্যে তিনি কিংবা সে প্রয়োজনে তার দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত যেকোনো ব্যক্তির দখলভুক্ত সকল নথি, বহি, রশিদ, দলিল, নগদ অর্থ, স্ট্যাম্প, জামিন বা অন্য কোনো প্রকার সরকারি সম্পত্তি পরীক্ষার অধিকারী হন।
১০. মহাহিসাব নিরীক্ষকের প্রয়োজন কেন?
উত্তর: প্রশাসনের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য মহাহিসাব নিরীক্ষকের প্রয়োজন। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের প্রধান শর্ত হলো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করা। আর এটি নিশ্চিত হয় সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার দক্ষতার মাধ্যমে।
বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নাম মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক। মহাহিসাব নিরীক্ষক জাতীয় স্বার্থের অভিভাবক হিসেবে সরকারি হিসাবের ত্রুটি-বিচ্যুতি উদ্ঘাটন করেন এবং স্বাধীনভাবে সরকারি অর্থ ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা করে আইনসভায় রিপোর্ট পেশ করেন। আর এসব কারণেই মহাহিসাব নিরীক্ষকের প্রয়োজন।
১১ . দুদকের গঠন ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: দুর্নীতি ও অন্যান্য সুনির্দিষ্ট অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনা করা, মামলা দায়ের এবং মামলা পরিচালনার মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি বিধানের লক্ষ্যে ২০০৪ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি দুদক গঠন করা হয়। দুদক একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন।
এই কমিশন দুর্নীতি ও দুর্নীতিমূলক কাজ প্রতিরোধ করে থাকে। দুর্নীতি দমন কমিশন গঠিত হয় ৩ জন কমিশনারের সমন্বয়ে। রাষ্ট্রপতি ৩ জন কমিশনারের মধ্য থেকে ১ জন চেয়ারম্যান নিয়োগ করেন। কমিশনারদের মেয়াদ চার বছর। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের ন্যায় চেয়ারম্যান ও কমিশনারকে অপসারণ করা যাবে নতুবা অপসারণ করা যাবে না।
১২. নির্বাচন কমিশন বলতে কী বোঝ?
উত্তর: যে সাংবিধানিক সংস্থা রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন, সংসদ নির্বাচন ও অন্যান্য নির্বাচন পরিচালনা করে সেই সাংবিধানিক সংস্থাকেই নির্বাচন কমিশন বলে। PN-পৌরনীতি নির্বাচন কমিশন আধুনিক প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার একটি অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করে থাকে।
আরও দেখুন: পৌরনীতি ও সুশাসন সকল অধ্যায় সমাধান
আশাকরি “পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৭ম অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ ও সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।