পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৮ম অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন: বাংলাদেশ বিশ্বে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে ১১ নং অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে বলা হয়েছে যে, প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
এ কারণে গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার সর্বস্তরে সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচনই সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করে। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ শাসক পরিবর্তনের সুযোগ লাভ করে। তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৮ম অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন
১. নির্বাচন কী?
উত্তর: নির্বাচন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি যার মাধ্যমে দেশের ভোটাধিকার প্রাপ্ত নাগরিকরা তাদের প্রতিনিধি বাছাই করে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাষ্ট্র ও সরকারের বিভিন্ন স্তরে জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনের মাধ্যমে একদিকে জনমত প্রকাশিত হয়। অন্যদিকে দেশের সকল স্তরে জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। তাই বাংলাদেশ সংবিধানের ১১নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।
২. নির্বাচকমণ্ডলী বলতে কী বোঝ?
উত্তর: নির্বাচকমণ্ডলী বলতে সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রে বসবাসরত সেই অধিবাসীকে বোঝায় যারা আইনসভা বা অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করেন। যারা ভোট দেন তাদেরকে ভোটার বা নির্বাচক বলে। আর এই নির্বাচকের সমষ্টিকে বলে নির্বাচকমণ্ডলী।
নির্বাকমণ্ডলীরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতিনিধি নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করে। তাই নির্বাচকমণ্ডলী বা ভোটারই হলো প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য যোগ্য বিচারক। তাছাড়া বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়স্ক যারা ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে তাদেরকে ভোটার বা নির্বাচকমণ্ডলী বলা হয়।
৩. নির্বাচনে কেন নাগরিকদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন?
উত্তর: নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নাগরিকরা রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশীদার হয় বিধায় নির্বাচনে নাগরিকদের অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন পরিচালিত। নাগরিকগণ তাদের ভোট প্রদানের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করে আইন প্রণয়ন এবং সরকার পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে। আর প্রতিনিধি বাছাইয়ের জন্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ জনগণ তথা নাগরিকের পক্ষেই শাসন পরিচালনা করে। আধুনিক প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের সফলতার পূর্বশর্তই হচ্ছে নির্বাচন। এজন্যই বর্তমান প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থায় নির্বাচনে নাগরিকের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
৪. গণভোট বলতে কী বোঝ?
উত্তর: রাষ্ট্রীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতানৈক্যের সৃষ্টি হলে জনগণের মতামত যাচাইয়ের জন্য যে ভোট গ্রহণ করা হয় তাই গণভোট। গণভোটে সকল প্রাপ্তবয়স্ক জনগণ তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদান করে থাকে। তবে বিশেষ করে কোনো দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট দেখা দিলে এ গণভোটের আয়োজন করা হয়। এতে কেবল হ্যাঁ এবং না যুক্ত প্রতীক থাকে বলে এটি হ্যাঁ-না ভোট নামেও পরিচিত। এটি প্রতিনিধি বাছাই নয় বরং মতামত যাচাই করতে আয়োজন করা হয়।
৫. ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: অধিকাংশ বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করায় ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল বাংলাদেশের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি। এ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনের পথ বেছে নেয়। এ সময় তারা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। এরূপ আন্দোলনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় ভোটার কম উপস্থিতির মূল কারণ ছিল।
৬. সর্বজনীন ভোটাধিকার বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: সার্বজনীন ভোটাধিকার বলতে ধর্ম-বর্ণ, ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রদান করাকে বোঝায়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য সর্বজনীন ভোটাধিকার নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। কেননা এটি আধুনিক গণতন্ত্রের আদর্শ।
তাছাড়া বাংলাদেশে ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে সর্বজনীন ভোটাধিকারের নীতি মেনে চলা হয়। বাংলাদেশ সংবিধানের ১২২নং অনুচ্ছেদে প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের কথা বলা হয়েছে। যে কারণে এদেশের সকল প্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছর বয়স্ক) নাগরিক ভোটদানের অধিকার রাখে।
৭. নারীর ভোটাধিকার কেন প্রয়োজন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী আর জনগণের অর্ধেক নারী হওয়ায় নারীর ভোটাধিকারের প্রয়োজন রয়েছে। নারীর ভোটাধিকার ছাড়া জনগণের সার্বভৌমত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে না। নারীদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে গণতন্ত্র চর্চা সম্ভব নয়।
ভোটাধিকার নারী-পুরুষ সবারই জন্মগত অধিকার। উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা পেলে নারীরা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে দক্ষতা ও যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারে। বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রে নারীরা নেত্রী হিসেবে, শাসক হিসেবে নিজেদের দক্ষতা ও যোগ্যতা উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছে। আর রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সফল হওয়ার জন্য নারীর ভোটাধিকারই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
৮. নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যাবলি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হলো দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করা। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান।
এই প্রতিষ্ঠানটি নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে। যেমন- ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচনি এলাকার জনসংখ্যানুপাতে নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান, নির্বাচনি তপশিল ও আচরণবিধি ঘোষণা, নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা প্রভৃতি।
৯. জনগণ ও নির্বাচকমণ্ডলীর পার্থক্য কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: জনগণ হচ্ছে সর্বস্তরের নাগরিক আর নির্বাচকমণ্ডলী হচ্ছে ভোটাধিকার প্রাপ্ত নাগরিক। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সকল জনগণকে ভোটাধিকার প্রদান করা হয় না। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে যারা ১৮ বছর পূর্ণ করেছে এবং কোনো আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত হয়নি তারা নির্বাচকমণ্ডলী। অন্যদিকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী- পুরুষ নির্বিশেষে দেশের আপামর জনসাধারণকে জনগণ বলা হয়।
১০. সমভোটাধিকার বলতে কী বোঝ?
উত্তর: সমভোটাধিকার বলতে সকল নাগরিকের জন্য ‘এক ব্যক্তি এক ভোট’ নীতিকেই বোঝায়। বাংলাদেশের সকল নাগরিকের ভোটদানের অধিকার ও গুরুত্ব একই সমান। ‘এক ব্যক্তি এক ভোট’ এই নীতিটি সকল নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য। জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও নারী-পুরুষ ভেদে একটি নির্বাচনি এলাকার জন্য একটিমাত্র ভোটার তালিকা অনুযায়ী সবাই ভোট দেবে এটাকেই সমভোটাধিকার বলে।
১১. নির্বাচন কমিশনের গঠন বর্ণনা কর।
উত্তর: বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা। এই সংস্থাটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কতিপয় নির্বাচন কমিশনার সমন্বয়ে গঠিত হয়। বাংলাদেশ সংবিধানের ১১৮ নং অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনের গঠন সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারবৃন্দ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন এবং সংসদের বিধান সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তাদের কর্মের শর্তাবলি নির্ধারণ করেন।
আরও দেখুন: পৌরনীতি ও সুশাসন সকল অধ্যায় সমাধান
আশাকরি “পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৮ম অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ ও সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।