পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৯ম অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন: বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। কোনো না কোনো দিক দিয়ে বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে প্রত্যেক রাষ্ট্রই অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য অপর রাষ্ট্রের সাথে বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টা চালায়। আর এই পারস্পরিক সহযোগিতা ও প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করেই বৈদেশিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে পৃথিবীর প্রত্যেক রাষ্ট্রই জাতীয় স্বার্থ (National Interest) সংরক্ষণের জন্য বৈদেশিক নীতি তৈরি করে থাকে।
১৯৯১ সালে পরাশক্তি হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান নাম রাশিয়া) ভাঙন, একক পরাশক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আবির্ভাব, মুক্ত বাজার অর্থনীতি, বিশ্বায়ন (Globalization) প্রভৃতি বিষয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ অধ্যায়ে আমরা বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির বৈশিষ্ট্য, সার্ক, ওআইসি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ ও জাতিসংঘের গঠন ও উদ্দেশ্য এবং এ সকল সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সম্বন্ধে জানব।
পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৯ম অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন
১. বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি বলতে বাংলাদেশের সাথে অন্য রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থরক্ষা করে বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপন, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে গৃহীত নীতিমালাকে বোঝায়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ, অভ্যন্তরীণ সমৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অক্ষুন্ন রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ “সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারও সাথে শত্রুতা নয়”- এ নীতির ভিত্তিতে নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নে ব্রতী হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এ সম্পর্কই বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি হিসেবে পরিচিত।
২. বৈদেশিক নীতি বলতে কী বাঝ? অথবা, বৈদেশিক নীতি কী?
উত্তর: বৈদেশিক নীতি হলো বিশ্বের একটি রাষ্ট্রের সাথে অন্য একটি রাষ্ট্রের বৈদেশিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনার লক্ষ্যে গৃহীত নীতিমালা। বৈদেশিক অর্থ অন্য দেশ সম্বন্ধীয় এবং ‘নীতি’ অর্থ বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রণীত কার্যাবলি।
তাই একটি রাষ্ট্র কর্তৃক অন্য রাষ্ট্রের সাথে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় রেখে বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপন, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে গৃহীত নীতিমালাই ঐ দেশের বৈদেশিক নীতি হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয় এ নীতির উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
৩. জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বলতে কী বোঝ?
উত্তর: জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বলতে বিশ্বের সামরিক জোট বা অন্য বৃহৎ কোনো জোটের মতাদর্শের বাইরে থেকে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করাকে বোঝায়। বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি স্বাধীন, ও জোট নিরপেক্ষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দ্ব্যর্থহীনভাবে স্বাধীন ও জোট নিরপেক্ষ বৈদেশিক নীতির কথা বলেছেন।
বাংলাদেশ সরকার প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ধারায় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবন পদ্ধতি গড়ে তোলার অধিকারে বিশ্বাসী। আর এ বিষয়টিই হলো জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের মূলকথা।
৪. ওআইসি (OIC) কেন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?
উত্তর: বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষার জন্য ওআইসি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বিশ্বের মুসলিম প্রধান দেশগুলোর সংগঠন হলো ওআইসি। মুসলমানদের ক্রমাবনতিশীল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের সংগঠিত করার জন্য মুসলিম নেতৃবৃন্দ এ সংস্থা গঠনে উদ্যোগী হন।
নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতিবোধ দৃঢ় করা, পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, ইসলামবিরোধী শক্তিসমূহের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার তাগিদে বিশেষ করে ১৯৬৯ সালে আল আকসা মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলিম দেশগুলোর প্রচেষ্টার মাধ্যমে ১৯৬৯ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর ওআইসি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
৫. বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির গুরুত্বপূর্ণ দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তর: বৈদেশিক নীতি হলো জাতীয় নীতির সেই অংশ, যা বহির্বিশ্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত। বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির গুরুত্বপূর্ণ দুটি বৈশিষ্ট্য হলো-
১. সবার সাথে বন্ধুত্ব বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো- সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়। ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ ঘোষণা দেন।
২. স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা: বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা এবং সমতা বজায় রাখা।
৬. সার্কের দুটি উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: সার্কের দুটি উদ্দেশ্য হলো-
১. দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের কল্যাণ সাধন ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।
২. অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা এবং বিজ্ঞান ও কারিগরি ক্ষেত্রে সহযোগিতা দান।
৭. কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান পদাধিকারবলে কমনওয়েলথের প্রধান?
উত্তর: ব্রিটেনের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাজা বা রানি পদাধিকারবলে এর প্রধান। কমনওয়েলথ হলো সাবেক ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রসমূহের শৃঙ্খলের একটি সংগঠন। এটি ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দপ্তর লন্ডনে অবস্থিত। তবে ব্রিটিশরা যেসব দেশকে শাসন করেছে, তার অধিকাংশ দেশ কমনওয়েলথ-এর সদস্য।
৮. জাতিসংঘের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: বিশ্বের সব জাতি-রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক শান্তি রক্ষা জাতিসংঘের মূল লক্ষ্য। জাতিসংঘের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো শান্তি ভঙ্গের হুমকি এবং আক্রমণাত্মক প্রবণতা ও কার্যকলাপ দূর করে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
বিভিন্ন জাতিসমূহের সমাধান করা। এছাড়া এ সংস্থার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক মৌলিক মানবাধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করা এবং দারিদ্রদ্র্য, রোগ ও অশিক্ষা দূরীকরণের জন্য প্রচেষ্টা চালানো।
৯. ইইউ গঠন করা হয় কেন?
উত্তর: ইউরোপীয় দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা পুনর্গঠনের জন্য ইইউ গঠন করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউরোপ মহাদেশের অধিকাংশ দেশের একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। এ সংস্থার মাধ্যমে ইউরোপের দেশগুলো নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে গতিশীল করে।
অত্যন্ত স্বল্পসময়ের মধ্যে তারা এর সুফল পায়। বর্তমানে ইউরোপ সত্যিকার অর্থেই বিশ্বে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক বিশাল শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছিল, বলা যায় সে লক্ষ্যগুলো অর্জিত হয়েছে।
১০. কমনওয়েলথ গঠন করা হয় কেন?
উত্তর: সাবেক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য কমনওয়েলথ গঠন করা হয়। সাবেক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত স্বাধীন ও আশ্রিত রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কমনওয়েলথ গঠিত হয়।
সাধারণত জাতিসংঘের সাথে নিজেদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমেই কমনওয়েলথ তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সংগঠনটির মাধ্যমে এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা গড়ে উঠেছে।
১১. জাতিসংঘ গঠন করা হয় কেন?
উত্তর: আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা সংরক্ষণসহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক অগ্রগতি এবং মানবাধিকার বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য জাতিসংঘ গঠন করা হয়। যুদ্ধ ও সংঘাত প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ গঠিত হয়েছিল।
অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা মানবিক বিষয়ে আন্তর্জাতিক সমস্যাসমূহ সমাধানের জন্য ১৯৪৫ সালে ৫১টি রাষ্ট্রের একটি সনদ স্বাক্ষর করার মাধ্যমে এ সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বলা যায়, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়।
১২. নিরাপত্তা পরিষদের গঠন ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: পাঁচটি স্থায়ী ও দশটি অস্থায়ী সদস্যসহ মোট পনেরোটি রাষ্ট্রের সমন্বয়ে নিরাপত্তা পরিষদ গঠিত। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলো হলো- যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স ও চীন।
এ রাষ্ট্রগুলোকে পঞ্চশক্তি নামে আখ্যায়িত করা হয়। স্থায়ী সদস্যরা প্রত্যেকে ভেটো ক্ষমতার অধিকারী। অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রসমূহ প্রতি দুই বছর অন্তর সাধারণ পরিষদের ভোটে নির্বাচিত হয়।
১৩. আন্তর্জাতিক আদালত গঠিত হয় কীভাবে?
উত্তর: আন্তর্জাতিক আদালত ১৫ জন বিচারক নিয়ে গঠিত হয়। আইনি প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান দিতে আন্তর্জাতিক আদালত গঠিত হয়। এ আদালতের ১৫জন বিচারকের মধ্যে ৯ জন বিচারকের উপস্থিতিতে কোরাম হয়। এর বিচারকদের কাজের মেয়াদ ৯ বছর।
সাধারণ ও নিরাপত্তা পরিষদ পৃথক অধিবেশনে বসে আদালতের বিচারকদের নির্বাচিত করে। কোনো সদস্য রাষ্ট্র হতে একজনের বেশি বিচারক নেওয়া যায় না।
১৪. লিগ অব নেশনস কেন সৃষ্টি হয়েছিল?
উত্তর: জাতিগত দ্বন্দ্ব নিরসন করে বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে লিগ অব নেশনস সৃষ্টি হয়েছিল। যুদ্ধ কখনো জাতিগত সমস্যা নিরসনের পথ হতে পারে না। যুদ্ধ ডেকে আনে ভয়ংকর ধ্বংসলীলা এবং মানবজাতির জন্য অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও অশান্তি। বিশ শতকের ইতিহাসে পৃথিবীজুড়ে দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়।
মূলত জাতিগত দ্বন্দ্ব নিরসনে মধ্যস্থতাকারী শান্তিকামী জনতা যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় চুপ করে থাকেনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২০ সালের ১০ই জানুয়ারি বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘লিগ অব নেশনস’ সৃষ্টি হয়েছিল।
আরও দেখুন: পৌরনীতি ও সুশাসন সকল অধ্যায় সমাধান
আশাকরি “পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৯ম অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ ও সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।