শব্দ ও বাক্যের উচ্চারণ – ৯ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ

৯ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ: আমি যুদ্ধে গিইলাম ক্যানো? দক্ষিণবঙ্গের লোকের কথায় সামান্য যে একটা টান থাকে, সেই টানের সঙ্গে সে বারদুয়েক ভেবে দেখার চেষ্টা করল, আমি যুদ্ধে গিইলাম ক্যানো? বাঁ পায়ের বুটটা সে তখন ছাড়েনি, হাঁটুর উপরে সেটা চেপে ধরে ডান হাতে রাইফেলের গায়ে হাত বুলোতে বুলোতে সে আর একবার কেন যুদ্ধে গিয়েছিল ভেবে দেখার চেষ্টা করে।


শব্দ ও বাক্যের উচ্চারণ – ৯ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ

হাসান আজিজুল হক (১৯৩৯-২০২১) বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে আছে ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’, ‘জীবন ঘষে আগুন’, ‘আগুনপাখি’ ইত্যাদি। নিচের গল্পটি হাসান আজিজুল হকের ‘নামহীন গোত্রহীন’ বই থেকে নেওয়া হয়েছে।

ফেরা গল্পের শব্দের অর্থ

উপদ্রুত: বিপদগ্রস্ত।
কচ্ছিস: বলছিস।
কোঁয়ানে: কোথায়।
গিইলাম: গেলাম।
গিহলি: গেলি।
ছ্যামরা: ছেলে।
ডাকপে: ডাকবে।
দাওয়া: বারান্দা।
ধরবানে: ধরব।
নড়াই: লড়াই।
পেল্লায়: মস্ত বড়ো।
মদ্যি: মধ্যে।
মাত্তর: মাত্র।
ম্যাড়মেড়ে: অনুজ্জ্বল।
সুঁই করে: শোঁ করে।


৯ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ

২.২.১ প্রমিমিত রূপ প্রমিত উচ্চাচারণ

‘ফেরা’ গল্পের কথোপকথনে বহু আঞ্চলিক শব্দ আছে। গল্প থেকে বাছাই করে পনেরোটি আঞ্চলিক শব্দ নিচের ছকের বাম কলামে লেখো। মাঝখানের কলামে শব্দটির প্রমিত রূপ লিখবে এবং ডান কলামে এর প্রমিত উচ্চারণ লিখবে। নিচে দুটি করে দেখানো হলো।

৯ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ
৯ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ
আঞ্চলিক শব্দ প্রমিত রূপ আঞ্চলিক শব্দ প্রমিত রূপ
গিলাইম  গিয়েছিলাম বাপ  বাবা
ঠ্যাং  পা  আইছি  আসছি
মদ্যি  মধ্যে তালি  তাহলে
উরে  ওরে আইছিলো  আসছিলো
বাপরে  বাবারে নিতি  নিতে
কনে  কোথায় দিইছে  দিছে
ছিলি  আছলি পোড়ায়  পুড়িয়ে

২.২.২ ভাষারূপের পরিবর্তন

‘ফেরা’ গল্পের কথোপকথনে ব্যবহৃত দশটি বাক্য নিচের ছকের বাম কলামে লেখো এবং ডান কলামে বাক্যগুলোর প্রমিত রূপ নির্দেশ করো। একটি নমুনা নিচে দেওয়া হলো। কাজ শেষে সহপাঠীদের সঙ্গে উত্তর নিয়ে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো।

৯ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ
৯ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ
আঞ্চলিলিক বাক্য প্রমিত রূপ
এতোদিন কনে ছিলি বাপ? এতোদিন কোথায় ছিলি বাবা? 
ডান ঠ্যাং কেটে ফেলার তিন দিন পর সমস্ত শরীর পচে গিয়ে আমিন মারা গেলো। ডান পা কেটে ফেলার তিন দিন পর সমস্ত শরীর পচে গিয়ে আমিন মারা গেলো। 
আলিফ রে, উরে আমার বাপরে! এতোদিন কনে ছিলি বাপ? আলিফ, ওরে আমার বাবারে! এতো দিন কোথায় ছিলি বাবা? 
আমি ফিরে আইছি মা! বাঁচে ছিলি তালি? আমি ফিরে আসছি মা! বেঁচে আছো তাহলে? 
তোর জন্য মরিনি, তোর জন্য বাঁচে আছি বাপ। তোমার জন্য মরিনি, তোমার জন্য বেচে আছি বাবা।
লোক আইছিলো আমার খোঁজ নিতি? লোক আসছিলো আমার খোজ নিতে? 
আমি যুদ্ধে গিইলাম ক্যানো? আমি যুদ্ধে গেলাম কেন? 
একদিন মিলিটারি আইলো আগুন দিতি। একদিন মিলিটারি আসলে আগুন দিতে। 
আগুন দিইছে, সব বাড়ি পোড়াই দিছে।  আগুন দিছে, সব বাড়ি পুড়িয়ে দিছে।
আমি বললাম, আলিফের খোঁজ জানে কিডা? আমি বললাম, আলিফের খোজ জানে কে?

প্রমিত ভাষা

অঞ্চলভেদে ভাষার ভিন্ন ভিন্ন রূপ থাকে। ভাষার এইসব রূপকে বলে আঞ্চলিক ভাষা। কোনো শব্দ অঞ্চলভেদে আলাদাভাবে উচ্চারিত হতে পারে, কিংবা একই অর্থ বোঝাতে আলাদা শব্দের প্রয়োগ হতে পারে। বাক্যের গঠনও অনেক সময়ে আলাদা হয়। আঞ্চলিক ভাষা সাধারণত মানুষের প্রথম ভাষা—এই ভাষাতেই মানুষ কথা বলা শুরু করে। গল্প-উপন্যাস-নাটকে বিভিন্ন চরিত্রের মুখে আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ দেখা যায়।

ভাষার এই আঞ্চলিক রূপ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগে কিছু সমস্যা তৈরি করে। সেই সমস্যা দূর করার জন্য ভাষার একটি রূপকে প্রমিত হিসেবে গ্রহণ করা হয়, যাতে সব অঞ্চলের মানুষ তা সহজে বুঝতে পারে। একই কারণে দেশের যাবতীয় আনুষ্ঠানিক যোগাযোগে, শিক্ষা কার্যক্রমে, দাপ্তরিক কাজে, গণমাধ্যমে, সাহিত্যকর্মে ভাষার প্রমিত রূপ ব্যবহৃত হয়। সকল অঞ্চলের মানুষ সহজে বুঝতে পারে ভাষার এমন রূপের নাম প্রমিত ভাষা।

কথ্য প্রমিত লেখ্য প্রমিত

প্রমিত ভাষার দুটি রূপ আছে: কথ্য প্রমিত ও লেখ্য প্রমিত। কথ্য প্রমিত ব্যবহৃত হয় আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলার সময়ে, অন্যদিকে লেখ্য প্রমিত ব্যবহৃত হয় লিখিত যোগাযোগের কাজে। কবিতা-গল্প-উপন্যাসে কখনো কখনো শব্দের কথ্য প্রমিত রূপ দেখা যায়। তবে আনুষ্ঠানিক গদ্যে শব্দের কথ্য প্রমিত রূপের পরিবর্তে লেখ্য প্রমিত রূপ ব্যবহার করা শ্রেয়। যেমন, শব্দের কথ্য প্রমিত রূপ—ধুলো, ফিতে, ভেতর ইত্যাদি। এগুলোর লেখ্য প্রমিত রূপ — ধুলা, ফিতা, ভিতর ইত্যাদি।


২.২.৩ আঞ্চলিক ভাষা থেকে প্রমিত ভাষায় রূপান্তর করি

তুমি তোমার চারপাশের মানুষজনের কাছ থেকে শুনে কিছু আঞ্চলিক বাক্য সংগ্রহ করো। নিচের ছকের বাম কলামে সংগৃহীত আঞ্চলিক বাক্যগুলো লেখো। এরপর ডান কলামে বাক্যগুলোকে প্রমিত ভাষায় রূপান্তর করো। বাক্য সংগ্রহের সময়ে খেয়াল রেখো যাতে বিবৃতিবাচক, প্রশ্নবাচক, অনুজ্ঞাবাচক ও আবেগবাচক – সব ধরনের বাক্যই থাকে।

শব্দ ও বাক্যের উচ্চারণ
শব্দ ও বাক্যের উচ্চারণ
সংগৃহীত আঞ্চলিক বাক্য রূপান্তরিত প্রমিত বাক্য
তুই ভালো আছিস? তুমি ভালো আছো? 
মুই এখন বাড়িত যাইম। আমি এখন বাড়ি যাবো। 
ওরে আল্লাহ! লোকটা আর বাচি নাই। ও আল্লাহ! লোকটা আর বেচে নেই। 
বাড়িত মেলা কাম আছে। বাড়িতে অনেক কাজ আছে। 
শীতকালে বিয়ান্না বেলা সূর্য দেখা যায় না। শীতকালে সকাল বেলা সূর্য দেখা যায় না। 
মোগো বাড়ি বরিশাল। আমাদের বাড়ি বরিশাল। 
আব্দুর রহিম কি বাড়িত আছিস। আব্দুর রহিম কি বাড়িতে আছো?
কোথাও কোন কাজ কাম পাচ্ছি না, খুব ঠ্যাকার মধ্যে আছি। কোথাও কোন কাজ পাচ্ছি না, অনেক অভাবে আছি। 
তুই কাল কই গেছলু বাপ? তুমি কাল কোথায় গেছলে বাবা? 
টেকার কি আকাল পরলো দুনিয়ায়? দুনিয়াতে কি টাকার অভাব হলো?

আরও দেখুন: ৯ম শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায় এর সমাধান
আরও দেখুন: বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করি – ৯ম শ্রেণির বাংলা ১ম অধ্যায়
আরও দেখুন: ধ্বনির উচ্চারণ – ৯ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ


আশাকরি “শব্দ ও বাক্যের উচ্চারণ – ৯ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ ও সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।

Leave a Comment