ধ্বনির উচ্চারণ – ৮ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ

৮ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ: আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ (১৯৩৪-২০০১) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট কবি। তাঁর উল্লেখযোগ্য কবিতার বইয়ের নাম ‘সাত নরী হার’, ‘আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি’ ইত্যাদি। নিচের কবিতাটি ভাষা-আন্দোলন বিষয়ক একটি বহুল পঠিত কবিতা। এটি কবির ‘সাত নরী হার’ কাব্য থেকে নেওয়া।


ধ্বনির উচ্চারণ – ৮ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ

“মাগো, ওরা বলে” কবিতার শব্দের অর্থ

উড়কি ধান: এক রকম ধান।
কথার ঝুড়ি: অনেক কথা।
ঝাপসা চোখে: অস্পষ্ট দৃষ্টিতে।
ডালের বড়ি: ডাল দিয়ে বানানো ছোটো বড়া।

দাওয়া: ঘরের বারান্দা।
নারকেলের চিড়ে: চিড়ার মতো করে বানানো নারকেলের টুকরা।
নুয়ে পড়া: ঝুলে পড়া।
বিন্নি ধান: এক রকম ধান।

ব্যবচ্ছেদ: কাটা-ছেঁড়া।
ভিটে: বাসভূমি।
মুড়কি: গুড় দিয়ে মাখানো খই।
শব: মৃতদেহ।


মনির কম্পনযাত্রা ও বায়ুর প্রবাহ অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনি

ধ্বনির কম্পনমাত্রা অনুযায়ী বিভাজন

ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে স্বরযন্ত্রে বায়ুর কম্পন কমবেশি হওয়ার ভিত্তিতে ব্যঞ্জনধ্বনিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়: ঘোষ ও অঘোষ।

ঘোষ ব্যঞ্জন: যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে স্বরযন্ত্রে কম্পন অপেক্ষাকৃত বেশি হয়, সেসব ধ্বনিকে বলে ঘোষধ্বনি।
যেমন: গ, ঘ, জ, ঝ, ড, ঢ, ড়, ঢ়, দ, ধ, ন, ব, ভ, ম, র, ল।

অঘোষ ব্যঞ্জন: যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে স্বরযন্ত্রে কম্পন অপেক্ষাকৃত কম হয়, সেসব ধ্বনিকে বলে অঘোষধ্বনি।
যেমন: ক, খ, চ, ছ, ট, ঠ, ত, থ, প, ফ, শ, স, হ।

ধ্বনি সৃষ্টিতে বায়ুর প্রবাহ অনুযায়ী বিভাজন ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে বায়ুপ্রবাহের বেগ কমবেশি হওয়ার ভিত্তিতে ব্যঞ্জনধ্বনিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়: অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ।

অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জন: সেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ফুসফুস থেকে নির্গত বায়ুপ্রবাহের মাত্রা অপেক্ষাকৃত কম, সেগুলোকে বলা হয় অল্পপ্রাণ ধ্বনি।
যেমন: ক, গ, চ, জ, ট, ড, ড়, ত, দ, প, ব, শ,স।

মহাপ্রাণ ব্যঞ্জন: সেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ফুসফুস থেকে নির্গত বায়ুপ্রবাহ অপেক্ষাকৃত বেশি, সেগুলোকে বলা হয় মহাপ্রাণ ধ্বনি।
যেমন: খ, ঘ, ছ, ঝ, ঠ, ঢ, ঢ়, থ, ধ, ফ, ভ, হ।


৮ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ

কম্পমাত্রা ও বায়ুপ্রবাহ অনুযায়ী ধ্বনির উচ্চরণ (পৃষ্ঠা – ২১)

‘মাগো, ওরা বলে’ কবিতা থেকে কিছু শব্দ নিচের তালিকায় দেওয়া হলো। লালচিহ্নিত বর্ণগুলো উচ্চারণ করে এগুলোর বৈশিষ্ট্য যাচাই করো এবং ছকে লেখো। কাজ শেষে সহপাঠীদের সঙ্গে নিজের উত্তর মেলাও, আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো। নিচে দুটি নমুনা-উত্তর করে দেওয়া হলো।

শব্দ লাল চিহ্নিত বর্ণটির ধ্বনি-বৈশিষ্ট্য
কুমড়ো (ক) অঘোষ অল্পপ্রাণ
ফুল (ফ) অঘোষ মহাপ্রাণ
লতা (ত) অঘোষ অল্পপ্রাণ
ডাটা (ড) ঘোষ অল্পপ্রাণ
গাছ (ছ) অঘোষ মহাপ্রাণ
ছুটি (ট) অঘোষ অল্পপ্রাণ
পকেট (প) অঘোষ অল্পপ্রাণ
ভেজা (ভ) ঘোষ মহাপ্রাণ
দেরি (দ) ঘোষ অল্পপ্রাণ
কথা (থ) অঘোষ মহাপ্রাণ
পাগল (গ) ঘোষ অল্পপ্রাণ
মুড়কি (ড়) ঘোষ অল্পপ্রাণ

ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণে বাপ্রত্যঙ্গের সক্রিয়তা

নিচের ছকের লালচিহ্নিত বর্ণগুলো উচ্চারণ করো। উচ্চারণের সময়ে কোন বাষ্প্রত্যঙ্গ ব্যবহৃত হচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করো এবং ছকের নির্দিষ্ট জায়গায় লেখো। কাজ শেষে সহপাঠীদের সঙ্গে নিজের উত্তর মেলাও, আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো। একটি নমুনা-উত্তর করে দেওয়া হলো।

শব্দ কোন বাকপ্রতঙ্গ ব্যবহৃত হয়েছে
(কণ্ঠ, তালু, মূর্ধা, দন্ত, ওষ্ঠ)
কুমড়ো (ক) কণ্ঠ
ফুল (ফ) ওষ্ঠ
লতা (ত) দন্ত
ডাটা (ড) মূর্ধা
গাছ (ছ) তালু
ছুটি (ট) মূর্ধা
পকেট (প) ওষ্ঠ
ভেজা (ভ) ওষ্ঠ
দেরি (দ) দন্ত
কথা (থ) দন্ত
পাগল (গ) কণ্ঠ
মুড়কি (ড়) মূর্ধা

উচ্চারণস্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনি

বাপ্রত্যঙ্গের যে জায়গায় বায়ু বাধা পেয়ে ব্যঞ্জনধ্বনি সৃষ্টি করে, সেই জায়গাটি হলো ঐ ব্যঞ্জনের উচ্চারণস্থান। উচ্চারণস্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়: ১. কণ্ঠ্য ব্যঞ্জন, ২. তালব্য ব্যঞ্জন, ৩. মূর্ধন্য ব্যঞ্জন, ৪. দন্ত্য ব্যঞ্জন, ৫. ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন।

কণ্ঠ্য ব্যঞ্জন: যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের পিছনের অংশ উঁচু হয়ে আলজিভের কাছাকাছি নরম তালুর কাছে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে কণ্ঠ্য ব্যঞ্জন বলে। কাকা, খালু, গাছ, ঘাস, কাঙাল প্রভৃতি শব্দের ক, খ, গ, ঘ, ঙ কণ্ঠ্য ব্যঞ্জনের উদাহরণ।

তালব্য ব্যঞ্জন: যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের ডগা খানিকটা প্রসারিত হয়ে শক্ত তালুর কাছে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে তালব্য ব্যঞ্জন বলে। চাচা, ছাতা, জাল, ঝড়, শসা প্রভৃতি শব্দের চ, ছ, জ, ঝ, শ তালব্য ব্যঞ্জনের উদাহরণ।

মূর্ধন্য ব্যঞ্জন: দন্তমূল এবং তালুর মাঝখানে যে উঁচু অংশ থাকে তার নাম মূর্ধা। যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের ডগা মূর্ধার সঙ্গে লেগে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে মূর্ধন্য ব্যঞ্জন বলে! টাকা, ঠেলাগাড়ি, ডাকাত, ঢোল, গাড়ি, মূঢ় প্রভৃতি শব্দের ট, ঠ, ড, ঢ, ড়, ঢ় মূর্ধন্য ব্যঞ্জনের উদাহরণ।

দন্ত্য ব্যঞ্জন: যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের ডগা উপরের পাটির দাঁতে লেগে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে দন্ত্য ব্যঞ্জন বলে। তাল; থালা, দাদা, ধান প্রভৃতি শব্দের ত, থ, দ, ধ দন্ত্য ব্যঞ্জনের উদাহরণ।

ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন: যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ঠোঁট দুটি কাছাকাছি এসে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন বলে। পাকা, ফল, বাবা, ভাই, মা প্রভৃতি শব্দের প, ফ, ব, ভ, ম ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জনের উদাহরণ।


কোন উচ্চারণস্থান অনুযায়ী ধ্বনির প্রকার

‘মাগো, ওরা বলে’ কবিতা থেকে কিছু শব্দ নিচে দেওয়া হলো। শব্দগুলোতে যেসব বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোর উচ্চারণস্থান বোঝার চেষ্টা করো। এরপর উচ্চারণস্থান অনুযায়ী ধ্বনিগুলোর প্রকার লেখো। একটি নমুনা উত্তর করে দেখানো হলো।

শব্দ কোন উচ্চারণস্থান অনুযায়ী ধ্বনির প্রকার
কুমড়ো  ক – কণ্ঠ ব্যঞ্জন, ম – ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন, ড় – মূর্ধান্য ব্যঞ্জন
ফুল ফ- ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন, ল – তালব্য ব্যঞ্জন 
লতা ল – তালব্য ব্যঞ্জন, ত- দন্ত্য ব্যঞ্জন
ডাটা  ড- মূর্ধা ব্যঞ্জন, ট – মূর্ধান্য ব্যঞ্জন
গাছ গ – কন্ঠ ব্যঞ্জন, ছ- তালব্য ব্যঞ্জন
ছুটি  ছ- তালব্য ব্যঞ্জন , ট – মূর্ধা ব্যঞ্জন
পকেট প – ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন, ক – কণ্ঠ ব্যঞ্জন, ট – মূর্ধান্য ব্যঞ্জন
ভেজা  ভ – ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন, জ – তালব্য ব্যঞ্জন
দেরি দ – দন্ত্য ব্যঞ্জন, র – মূর্ধান্য ব্যঞ্জন
কথা  ক – কণ্ঠ ব্যঞ্জন, থ – দন্ত ব্যঞ্জন
পাগল  প – ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন, গ – কণ্ঠ ব্যঞ্জন, ল – তালব্য ব্যঞ্জন
মুড়কি ম – ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন , ড় – মূর্ধান্য ব্যঞ্জন, ক – কণ্ঠ ব্যঞ্জন

আরও দেখুন: ৮ম শ্রেণির সকল অধ্যায় এর সমাধান
আরও দেখুন: ৮ম শ্রেণির বাংলা ১ম অধ্যায়


আশাকরি “ধ্বনির উচ্চারণ – ৮ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ ও সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।

Leave a Comment