লিখিত ভাষায় প্রমিত রীতি- ৮ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ

৮ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ: অপু জন্মিয়া অবধি কোথাও কখনো যায় নাই। এ গাঁয়েরই বকুলতলা, গোঁসাইবাগান, চালতেতলা, নদীর ধার, বিড়ো জোর নবাবগঞ্জ যাইবার পাকা সড়ক-এই পর্যন্ত তাহার দৌড়। মাঝে মাঝে বৈশাখ কি জ্যৈষ্ঠ মাসে খুব গরম পড়িলে বৈকালে দিদির সঙ্গে নদীর ঘাটে গিয়া দাঁড়াইয়া থাকিত। আজ সেই অপু সর্বপ্রথম গ্রামের বাহিরে পা দিল। কয়েকদিন হইতেই উৎসাহে তাহার রাত্রিতে ঘুম হওয়া দায় হইয়া পড়িয়াছিল। দিন গনিতে গনিতে অবশেষে যাইবার দিন আসিয়া গেল।


লিখিত ভাষায় প্রমিত রীতি- ৮ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০) একজন বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক। তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস ‘পথের পাঁচালি’। এই উপন্যাস থেকে সত্যজিৎ রায় একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন যা আন্তর্জাতিক খ্যাতি পায়। বিভূতিভূষণের উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘অপরাজিত’, ‘আরণ্যক’, ‘চাঁদের পাহাড়’, ‘ইছামতী’, ‘অশনি সংকেত’ ইত্যাদি। নিচের অংশটুকু ‘পথের পাঁচালি’ থেকে নেওয়া।

রেলের পথ গল্পের শব্দের অর্থ

অগ্রসর: সামনে যাওয়া।
অবধি: পর্যন্ত।
আবন্ধ থাকা: আটকে থাকা।

একদৃষ্টে: অপলক চোখে।
গনিতে গনিতে: গুনতে গুনতে।
ঝাপসা: অস্পষ্ট।

ফটক: সদর দরজা।
রাঙ্গী গাই: লাল রঙের গাভি।

শোলা গাছ: জলাভূমিতে উৎপন্ন গুল্ম জাতীয় গাছ।
সতৃষ্ণ দৃষ্টি: আগ্রহী চোখ।
হোগলা: জলাভূমিতে উৎপন্ন তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ।


৮ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ

২.৩.১ লিখিত গদ্যে প্রমিত ভাষার ব্যবহার

‘রেলের পথ’ গল্প থেকে সর্বনাম শব্দ খুঁজে বের করো এবং নিচের ছকের বাম কলামে লেখো। এরপর সর্বনামগুলোর প্রমিত রূপ ডান কলামে লেখো। কাজ শেষে সহপাঠীদের সঙ্গে মিলিয়ে নাও এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো। একটি নমুনা উত্তর করে দেওয়া হলো।

গল্পে ব্যবহৃত সর্বনাম শব্দ শব্দের প্রমিত রূপ
তাহার  তার 
তাহাদের তাদের 
তোকে  তোমাকে 
তাহারা  তারা

একইভাবে গল্প থেকে ক্রিয়া শব্দ খুঁজে বের করো এবং নিচের ছকের বাম কলামে লেখো। এরপর ক্রিয়াগুলোর প্রমিত রূপ ডান কলামে লেখো। কাজ শেষে সহপাঠীদের সঙ্গে মিলিয়ে নাও এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো। একটি নমুনা উত্তর করে দেওয়া হলো।

গল্পে ব্যবহৃত ক্রিয়া শব্দ শব্দের প্রমিত রূপ
আসিয়াছিল এসেছিল
যাইবার  যাওয়ার
পড়িয়াছিলো পরেছিলো 
হারাইয়াছিলো হারিয়েছিলো
দেখতেছিলো দেখেছিলো

সাধুরীতি

সাধুরীতি হলো লিখিত বাংলা ভাষার একটি সেকেলে রূপ। এই রীতিতে কেউ কথা বলত না, এটি ছিল কেবল লেখার ভাষা। এক সময়ে লিখিত ভাষার আদর্শ রূপ হিসেবে এটি ব্যবহৃত হতো। এই রীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়া শব্দের রূপ মুখের ভাষার তুলনায় অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ। উনিশ ও বিশ শতকের প্রচুর সাহিত্যকর্ম এই রীতিতে লেখা হয়েছে। ১৯৭২ সালে গৃহীত বাংলাদেশের সংবিধানও সাধুরীতিতে রচিত। ‘রেলের পথ’ গল্পটি সাধুরীতির একটি নমুনা।


২.৩.২ সাধুরীতির বাক্যকে প্রমিত বাক্যে রূপান্তর

‘রেলের পথ’ গল্প থেকে সাধুরীতির কয়েকটি বাক্য নিচের ছকে লেখো এবং একইসঙ্গে বাক্যগুলোকে প্রমিত গদ্যরীতিতে রূপান্তর করো। কাজ শেষে সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করে নাও। একটি নমুনা-উত্তর করে দেওয়া হলো।

সাধুরীতির বাক্য প্রমিত রূপ
দিন গনিতে গনিতে অবশেষে যাইবার দিন আসিয়া গেল।  দিন গুনতে গুনতে অবশেষে যাওয়ার দিন এসে গেল। 
অপু জন্মিয়া অবধি কোথাও কখনো যায় নাই। অপু আজ অব্দি কোথাও কখনো যায় নি।
বড়ো জোর নবাবগঞ্জ যাইবার পাকা সড়ক-এই পর্যন্ত তাহার দৌড়। বড়ো জোর নবাবগঞ্জ যাওয়ার পাকা সড়ক-এই পর্যন্ত তাহার দৌড়।
সেবার তাদের রাঙ্গী-গাইয়ের বাছুর হারাইয়াছিল। ওই সময় তাদের লাল রঙের গাভির বাছুর হারিয়েছিলো
সে তাহার দিদির সঙ্গে দক্ষিণ মাঠে বাছুর খুঁজিতে আসিয়াছিল। সে তার দিদির সঙ্গে দক্ষিণ মাঠে বাছুর খুজতে এসেছিল।
তাহার দিদি বলিল-বড্ড অনেক দূর বোধ হয় যাওয়া যাবে না। তার দিদি বলল- বড্ড অনেক দূর বোধ হয় যাওয়া যাবে না।
তাহার সতৃষ্ণ দৃষ্টি কিছু দূরের দিকে আবদ্ধ ছিল; লোভও হইতেছিল, ভয়ও হইতেছিল। তার সতৃষ্ণ দৃষ্টি কিছু দূরের দিকে আবদ্ধ ছিল; লোভও হচ্ছিলো, ভয়ও হচ্ছিলো।
প্রথম তাহারা একটুখানি এদিক ওদিক চাহিয়া দেখিল-কেহ তাহাদিগকে লক্ষ করিতেছে কি না। প্রথম তারা একটু এদিক ওদিক চেয়ে দেখল-কেউ তাদেরকে  লক্ষ করছে কি না।
এইখানে আসিয়া তাহারা পথ হারাইয়া ফেলিল। এখানে এসে তারা পথ হারিয়ে ফেলল।

আরও দেখুন: ৮ম শ্রেণির বাংলা ১ম অধ্যায়
আরও দেখুন: ধ্বনির উচ্চারণ – ৮ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ
আরও দেখুন: শব্দের উচ্চারণ – ৮ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ


আশাকরি “লিখিত ভাষায় প্রমিত রীতি- ৮ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ ও সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।

Leave a Comment