৮ম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ: যেসব বৈশিষ্ট্য থাকলে কোনো লেখাকে প্রায়োগিক লেখা বলা যায়, সেসব বৈশিষ্ট্যের মধ্য থেকে তিনটি বৈশিষ্ট্য নিচে লেখো। লেখার পরে সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো।
প্রায়োগিক লেখার বৈশিষ্ট্য
১. প্রায়োগিক লেখা বাস্তব জীবনের সাথে সম্পর্কিত।
২. প্রায়োগিক লেখার ক্ষেত্রে স্বাস কাল-পাত্র বিবেচনায় রাখতে হয়।
৩. প্রায়োগিক লেখায় স্মৃতিচারণ করা হয়।
প্রায়োগিক লেখা – ৮ম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ
৩.১.২ প্রায়োগিক লেখার উদ্দেশ্য
ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রায়োগিক লেখা সম্পর্কে জেনেছি। একেক ধরনের প্রায়োগিক লেখা একেক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। নিচের ছকের বাম পাশের কলামে যোগাযোগের কিছু উদ্দেশ্য দেওয়া হলো। উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কী ধরনের প্রায়োগিক লেখা প্রয়োজন হতে পারে, তা নিচের ছকের ডান পাশের কলামে লেখো। এরপর সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো।
উদ্দেশ্য | প্রায়োগিক লেখার ধরন |
অনুষ্ঠানের খবর জানানো | নোটিশ বোর্ড, দাওয়াত কার্ড |
প্রচার-প্রচারণা করা | পোর্টটার, ব্যানার |
সচেতনতা বাড়ানো | বিলবোর্ড |
পণ্যের বিবরণ তুলে ধরা | সাইনবোর্ড |
পারস্পরিক যোগাযোগ করা | চিঠিপত্র, ইমেইল |
প্রায়োগিক লেখা: ভাষণ
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির পিতা। ভাষা-আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য তিনি বহুবার কারাবরণ করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাঁর রচিত তিনটি বইয়ের নাম ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’। ভাষণটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান থেকে সংকলন করা। হয়েছে।
ভাষণের প্রেক্ষাপট
১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের ফলে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর ক্ষমতায় এসে নতুন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। নির্বাচনের ফল অনুযায়ী পাকিস্তানের সরকার গঠন করার কথা ছিল আওয়ামী লীগের। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ষড়যন্ত্র শুরু করে।
সেই ষড়যন্ত্রের প্রতিক্রিয়ায় পূর্ববাংলার মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ঘটনার ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ২০১৭ সালের ৩০শে অক্টোবর ইউনেস্কো এই ভাষণটিকে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
৮ম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ
৭ই মার্চ ভাষণ শব্দের অর্থ
আরটিসি: রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স; গোলটেবিল বৈঠক।
ব্যারাক: সেনাছাউনি।
ইউনেস্কো: জাতিসংঘের একটি সংস্থা। উইড: প্রত্যাহার।
মার্শাল ল: সামরিক শাসন।
শাসনতন্ত্র: সংবিধান।
সুপ্রিমকোর্ট: সর্বোচ্চ আদালত।
সেক্রেটারিয়েট: সচিবালয়।
সেমি-গভর্নমেন্ট: আধা সরকারি।
হাইকোর্ট: উচ্চ আদালত।
ওয়াপদা: পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
জজকোর্ট: জেলা আদালত।
ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি: জাতীয় সংসদ।
৩.১.৩ পড়ে কী বুঝলাম
‘৭ই মার্চের ভাষণ’ রচনার ভিত্তিতে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া আছে। তোমার সহপাঠীর সঙ্গে প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করো, সংক্ষেপে এগুলোর উত্তর তৈরি করো এবং উপস্থাপন করো। উপস্থাপনার শেষে শিক্ষকের। পরামর্শ অনুযায়ী সংশোধন করো।
ক. এই ভাষণের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কথা নিজের ভাষায় লেখো।
১. এই ঐতিজ্ঞাসিক ভাষনে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ঘটনা উল্লেখ করা হয়।
২. ১৯৫২ সালের ভাষা অন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬৬ এর ৬ দফা, ১৯৬৯ এর গণ অভুথ্যান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
৩. মুক্তির সংগ্রাম এর আহ্বান জানানো হয়।
খ. বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছে?
১৯৫২ সাল থেকে বাংলার দামাল ছেলেরা বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে। এরপর ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়, এবং অবশেষে আমরা স্বাধীনতা লাভ কবি। তাই এ ভাষণ বাংলার মানুষের মুক্তিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
গ. সাধারণ গদ্য রচনা থেকে ভাষণ কোন দিক থেকে আলাদা?
১. এখনে বাস্তব জীবনের ঘটনা তুলে ধরা হয়।
২. পূর্ববর্তী স্মৃতি চারণ করা হয়।
৩. ভাষন উপস্থিত জনতা উপলক্ষে দেওয়া হয়।
ঘ. কী কী উপলক্ষে ভাষণ দেওয়া হয়?
যেসব কারণে ৭ই মার্চ এর ভাষণ দেওয়া হয় –
১. বাংলা ভাষার জন্য দেয়া হয়।
২. বাঙ্গালির মুক্তির জন্য দেয়া হয়।
৩. পকিস্তানের শোষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে এ ভাষণ দেয়া হয়।
৩.১.৪ কেন প্রায়োগিক লেখা
প্রশ্ন- ‘৭ই মার্চের ভাষণ’ শিরোনামের রচনাটিকে কী কী কারণে প্রায়োগিক লেখা বলা যায়?
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) বাঙ্গালি জাতির মুক্তির জন্য যে ভাষণ প্রদান করেন সেই ভাষণ টি ৭ই মার্চ এর ভাষণ নামে পরিচিত। এই ভাষণটি বাস্তব জীবনের সাথে সম্পর্কিত। এখানে স্থান-কাল- পাত্র বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এছাড়াও ৭ই মার্চ এর ভাষণে স্মৃতিচারণ করা হয়েছে। উপরিউক্ত কারনে, “৭ই মার্চের ভাষণ” শিরোনাম এর রচনাটিকে প্রয়োগিক লেখা বলা হয়।
ভাষণ
ভাষণ এক ধরনের বক্তৃতা। কোনো তথ্য জানানোর জন্য, কোনো বিষয় উপস্থাপনের জন্য, কিংবা জনমত গঠনের জন্য ভাষণ দেওয়া হয়ে থাকে। ভাষণ লিখিত হতে পারে, তবে মুখে বলা বা পাঠ করার পরেই ভাষণ নামে চিহ্নিত হয়। যিনি ভাষণ দেন, তাঁকে বলে বরুণ। যাঁরা ভাষণ শোনেন, তাঁরা হলেন শ্রোতা। ভাষণ দেওয়ার সময়ে বক্তণ সাধারণত শ্রোতাকে সম্বোধন করে থাকেন। ভাষণ এক ধরনের প্রায়োগিক রচনা।
আরও দেখুন: ৮ম শ্রেণির বাংলা ১ম অধ্যায়
আরও দেখুন: ধ্বনির উচ্চারণ – ৮ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ
আরও দেখুন: শব্দের উচ্চারণ – ৮ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ
আরও দেখুন: লিখিত ভাষায় প্রমিত রীতি- ৮ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ
আশাকরি “প্রায়োগিক লেখা – ৮ম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ ও সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।