তথ্যমূলক লেখা – ৮ম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ

৮ম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ: যেসব বৈশিষ্ট্য থাকলে কোনো লেখাকে তথ্যমূলক লেখা বলা যায়, সেসব বৈশিষ্ট্যের মধ্য থেকে তিনটি বৈশিষ্ট্য নিচে লেখো। লেখার পরে সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো।

তথ্যমূলক লেখার বৈশিষ্ট্য

  • বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য পরিকেশন করা হয়।
  • তথ্য উপস্থাপনের আগে তথ্যের সত্যতা যাচাই করা হয়।
  • জানা অজানা নানা বিষয় তুলে ধরা হয়।

তথ্যমূলক লেখা – ৮ম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ (১৮৮৫-১৯৬৯) বিখ্যাত ভাষাবিদ। তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে এমএ ডিগ্রি এবং প্যারিসের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সংস্কৃত ও বাংলা’ বিভাগে তিনি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে আছে ‘বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত’, ‘বাংলাভাষার ব্যাকরণ’, ‘বাংলা সাহিত্যের কথা’ ইত্যাদি। ‘আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’ তাঁর সম্পাদিত একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিধান।

ইবনে বতুতার ভ্রমণ

ইবনে বতুতা মরক্কোর তানজাহ শহরে ১৩০৪ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। ১৩২৬ খ্রিষ্টাব্দে ২২ বছর বয়সে ইজের উদ্দেশ্যে তিনি জন্মভূমি থেকে রওনা হন। ভূমধ্যসাগরের তীরস্থ আফ্রিকার প্রধান প্রধান শহরগুলি ভ্রমণ কে শেষে তিনি মিশরে উপস্থিত হন। সেখান থেকে আলেকজান্দ্রিয়া বন্দরে পৌঁছে মক্কা শরিফে যাওয়ার উদ্যোগ নেন। সেই দেশের রাজা তখন মোগলদের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন।

ইবনে বতুতা সেজন্য সেখানে কোনো জাহাজ না পেয়ে পুনরায় মিশরে ফিরে আসেন। সেখান থেকে তিনি সিরিয়া যান। দামেস্কে গিয়ে হাদিসের বিদ্যায় দক্ষতা লাভ করেন। তাঁর শিক্ষকগণের মধ্যে দুজন বিদুষী রমণীও ছিলেন। তারপর তিনি সেখান থেকে গত বছরের হজের সংকল্প পূরণের জন্য প্রথমত মদিনা শরিফে উপস্থিত হন। পরে মক্কা শরিফে গিয়ে হজ সম্পন্ন করেন।

ইবনে বতুতার ভ্রমণ গল্পের শব্দের অর্থ

উদ্যোগ: প্রস্তুতি।
বিদুষী: বিদ্বান (নারীবাচক)।
তীরস্থ: তীরবর্তী।
বৃত্তান্ত: বিবরণ।

সওয়ারী: আরোহী।
স্মারকলিপি: সম্মিলিত আবেদনপত্র।
পদানত: পরাজিত।
বংশোদ্ভূত: বংশে জন্ম নেওয়া।

এই রচনায় ব্যবহৃত স্থাননাম

আফগানিস্তান: আন্দরাব, কুন্দুস, কুরাম পাস, গজনি, চরখ, পাঞ্জ শির, পারোয়ান, পাশাই, হিরাত।
আফ্রিকা: আলেকজান্দ্রিয়া, উল্লুজা, ক্রিমিয়া, জাঞ্জিবার, তানজাহ, তুনিস, ফেজ, মরক্কো, মশহদ, মিশর।

আরব দেশ: ইয়ামেন, এডেন, ওমান, জাফর, জেদ্দা, দামেস্ক, মদিনা, মাসকাট, সিরিয়া, হাজরামাউত।
ইউরোপ: বুলগার, সরায়, সার্ভনিয়া, স্পেন, হাজী তুরখান।

ইন্দোনেশিয়া: সুমাত্রা।
ইরাক: ওয়াসেত, কির্মাশ, কুফা, নাজাফ আশরাফ, বশরা, বাগদাদ, মারভিন, রওয়াক।

ইরান: ইয়াজ্জাদ, ইস্পাহান, গায়রুন, নয়শাবুর, শিরাজ, শুশতার, হরমুজ।
উজবেকিস্তান: বোখারা।

কাজাখাস্তান: কাজাখ।
তুরস্ক: আনাতোলিয়ায়, বুরসা।
মায়ানমার: পেগু।

ভারত: অযোধ্যা, আমরোহা, উজ্জয়িনী, কনৌজ, কন্ধার, কামরূপ, কালিকট, কাশ্মীর, কোইল, কোলাম, গোয়া, গোয়ালিয়র, ঘোঘা, চন্দেরী, তালপাত, দৌলতাবাদ, পাকপট্টন, বাহারুচ, বিজনোর, বিয়ানা, মাদুরাই, মালাবার, মুলতান, লাহিরী, শালিয়াত, সপ্তগ্রাম, হানুর।


৮ম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ

৩.৩.২ পড়ে কী বুঝলাম

‘ইবনে বতুতার ভ্রমণ’ রচনার ভিত্তিতে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া আছে। তোমার একজন সহপাঠীর সাথে এগুলো নিয়ে আলোচনা করো এবং সংক্ষেপে উত্তর তৈরি করো।

ক. এই রচনায় ইবনে বতুতাকে কী ধরনের ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে?
উত্তর: এই রচনায় ইবনে বতুতা কে Traveler বা ভ্রমনকারী, হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। মাত্র ২২ বছর বয়সে হজের উদ্দেশ্যে রওনা করে দীর্ঘ ২৮ বছরে তিনি ৯৫ হাজার মাইল ভ্রমন করেন।

খ. ‘কিন্তু দেশে ফিরেও তিনি স্থির থাকতে পারেননি।’-কী কারণে ইবনে বতুতা স্থির থাকতে পারেননি বলে মনে করো?
উত্তর: ইবনে বতুতা ১ম ভ্রমন শুরু করেন হজ করার উদ্দেশ্যে মাত্র ২২ বছর বয়সে। এর পরের ২৫ বছর তিনি এশিয়া, অফ্রিকা সহ বিভিন্ন স্থানে ভ্রমন করে ২৫ বছর পর দেশে আসন। দেশে ফিরেই তিনি সুদান ভ্রমনে বের হন।

তাই কাবি বলেছিলেন ‘কিন্তু দেশে ফিরেও তিনি স্থির থাকতে পারেন নি’।

গ. দেশে কিংবা দেশের বাইরে ভ্রমণের ব্যাপারে তোমার কোনো অভিজ্ঞতা, ইচ্ছা বা মতামত থাকলে তা উল্লেখ করো।
উত্তর: বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা।, বাংলাদেশের পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এর অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ বারা যায়। গতবছর আমরা পুরো পরিবার পঞ্চাগড় গিয়েছিলাম কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য। এবার শীতের ছুটিতে দেশের বাহিরে দার্জিলিং যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।


৩.৩.৩ লেখা নিয়ে মতামত

‘ইবনে বতুতার ভ্রমণ’ রচনাটির যেসব বক্তব্য নিয়ে তোোমার মতামত রয়েছে, বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা নিচের ছকে লেখো। কাজ শেষে কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো। একটি
নমুনা দেওয়া হলো।

‘ইবনে বতুতার ভ্রমণ’ রচননায় যা যা আছ আমার জিজ্ঞাসা ও মতামত
১. ইবনে বতুতা মরক্কোর তানজাহ শহরে ১৩০৪ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। মরক্কো কোথায়, তা মানচিত্রে দেখতে হবে।
২. দামেস্কে গিয়ে হাদিসের বিদ্যায় দক্ষতা লাভ করেন। দামেস্ক কোথায়, তা মানচিত্রে দেখতে হবে।
৩. ইবনে বতুতা ২৮ বছরে ৯৫ হাজার মাইল ভ্রমণ করেন। ৯৫ হাজার মাইলে কত কিলোমিটার হয় তা বের করতে হবে। 

৩.৩.৪ কেন তথ্যমূলক লেখা

‘ইবনে বতুতার ভ্রমণ’ শিরোনামের রচনাটিকে কেন তথ্যমূলক লেখা বলা যায়?

ইবনে বতুতা রচনায়, ইবনে বতুতার ভ্রমন সম্পর্কে তুলে ধরা হয়। এছাড়াও নানা জানা অজানা জায়গার সাথে আমাদের পরিচয় ঘটে। অর্থাৎ, এই রচনায় নানা বিষয়ে তথ্য পরিবেশন করা হয়।

উপরিউক্ত কারণে ‘ইবনে বতুতার ভ্রমণ’ শিরোনামের রচনাকে তথ্যমূলক লেখা বলা হয়।

তথ্যমূলক লেখা

যেসব রচনায় তথ্য পরিবেশন করা হয়, সেগুলোকে তথ্যমূলক লেখা বলে। এ ধরনের লেখায় তথ্য পরিবেশনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয়। বইপত্র পড়ে, অনলাইনের মাধ্যমে কিংবা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তথ্য পাওয়া যায়। তথ্য উপস্থাপনের সময়ে জানা তথ্যও নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে মিলিয়ে নিতে হয়। ‘ইবনে বতুতার ভ্রমণ’ রচনায় একজন পর্যটকের ভ্রমণপথ সম্পর্কে খানিক ধারণা পাওয়া যায়। এই ভ্রমণপথের সূত্রে অনেক অজানা স্থাননামের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটে।


আরও দেখুন: ৮ম শ্রেণির বাংলা ১ম অধ্যায়
আরও দেখুন: ধ্বনির উচ্চারণ – ৮ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ
আরও দেখুন: শব্দের উচ্চারণ – ৮ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ
আরও দেখুন: লিখিত ভাষায় প্রমিত রীতি- ৮ম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ
আরও দেখুন: প্রায়োগিক লেখা – ৮ম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ
আরও দেখুন: বিবরণমূলক লেখা – ৮ম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ


আশাকরি “তথ্যমূলক লেখা – ৮ম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ ও সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।

Leave a Comment